Coronavirus in West Bengal

‘দূরে বাড়ি হলে এখানেই থাকুন’, আর্জি আইডি-র

করোনা-হাসপাতালে কাজ করার ‘অপরাধে’ একাধিক কর্মী ইতিমধ্যেই হেনস্থার শিকার হয়েছেন।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২৭
Share:

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল

নিরাপদ নন হাসপাতালকর্মীরা। তাই তাঁদের বাড়িতে ছাড়তে ভয় পাচ্ছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সব কর্মীকে তাঁদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া বা তাঁদের নিরাপত্তার দিকটি সুরক্ষিত করার পরিকাঠামো হাসপাতালের নেই। তাই কর্মীদের কাছে কর্তৃপক্ষের আর্জি, ‘দূরে বাড়ি হলে এখানেই থাকুন।’

Advertisement

করোনা-হাসপাতালে কাজ করার ‘অপরাধে’ একাধিক কর্মী ইতিমধ্যেই হেনস্থার শিকার হয়েছেন। গত সপ্তাহে রানাঘাটের বাসিন্দা, আইডি-র এক কর্মীকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হওয়ায় বিবৃতি দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যারা এটা করছে, তাদের কিন্তু ধরে জেলে দিতে পারি। কমপক্ষে ছ’মাস বা এক বছর জেলও হতে পারে। কিন্তু এটা আমরা চাইছি না। রানাঘাটের মতো আরও সাত-আটটি কেস আমাদের কাছে এসেছে। যদি কেউ এ রকম করে, পরিবারের মা-বোনেদের বলব, তাঁরা এর বিরোধিতা করতে এগিয়ে আসুন।’’ প্রয়োজনে ওই কর্মীকে সরকারি ভাড়ার ফ্ল্যাটে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বেলেঘাটা আইডি-র অধ্যক্ষ অণিমা হালদার বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্মী যাঁদের দূরে বাড়ি, তাঁদের নিরাপদে বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। তাই তাঁরা এখানেই থাকুন, এই অনুরোধ করেছি। বাধ্যতামূলক নয়, স্বেচ্ছায় থাকতে পারেন তাঁরা।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, বর্তমানে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা করা থাকার জায়গায় চিকিৎসক ও অ-চিকিৎসক মিলিয়ে ৫০ জনের মতো থাকছেন। তা ছাড়া হাসপাতালের নিজস্ব কর্মী-আবাসন তো রয়েছেই। যদিও রবিবারই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, করোনা-চিকিৎসায় সরাসরি যাঁরা রোগীর সংস্পর্শে আসছেন, অর্থাৎ চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টানা সাত দিন ডিউটি চলাকালীন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাতেই থাকতে হবে। সংক্রমণের আশঙ্কা ঠেকাতে এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক ও শারীরিক ধকল কমাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: উপসর্গ মিলল ২ জনের, বাইপাসের ধারে ১৫ হাজার মানুষের বস্তি কোয়রান্টিনে

প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কোভিড-১৯ সংক্রমণের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আরও একটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে, যার শিকার হতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্স এবং হাসপাতালকর্মীদের। যে সব কেন্দ্রে করোনার চিকিৎসা করা হচ্ছে, সেখানকার কর্মী এবং তাঁদের পরিবারকে নিজেদের এলাকায় বিক্ষোভের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বিক্ষোভের মূল সুর একটাই, তাঁরা করোনা-চিকিৎসাকেন্দ্রে কাজ করেন, অতএব তাঁদের উপস্থিতি এলাকার পক্ষে বিপজ্জনক!

যেমন গত সপ্তাহেই নিজের বাড়িতে ফিরে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল আইডি-র কর্মী চিত্রা মণ্ডলকে। রানাঘাট এক নম্বর ব্লকের ন’পাড়া-মুসুন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা চিত্রা আইডি-র অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মী। করোনা-সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই তাঁর বাড়ি ফেরাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ দানা বাঁধছিল গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয় গত সপ্তাহে। চিত্রার পরিবারকে কার্যত একঘরে করে রাখা হয়েছিল। ক্রমাগত হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল। খবরটি প্রকাশ্যে আসার পরে স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় হয়।

আরও পড়ুন: সার্ক দেশে কেন ‘মন্থর’ করোনা? গবেষণার ডাক বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্টে

পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাটি নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার পরে গ্রামের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলে রবিবার জানালেন চিত্রা। তিনি শনিবার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনিক তৎপরতা এবং মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরে তাঁকে এ বার আর কোনও বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়নি বলে তিনি জানান। এ দিন চিত্রা বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওখানেই থাকার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাড়ি আমাকে আসতেই হবে। কারণ, আমার বাবা মারা গিয়েছেন। মা এবং বোন একা থাকেন এখানে। তবে এ বার কোনও অসুবিধা হয়নি।’’ ন’পাড়া-মুসুন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নবীন মণ্ডল বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সব ঠিক রয়েছে। আমরা সব সময়ে নজর রাখছি।’’

চিত্রার এলাকার মতো ‘পরিবর্তন’ অন্যত্র না-ও হতে পারে। তাই হাসপাতালের কর্মীদের সুরক্ষার স্বার্থে তাঁদের হাসপাতালের কাছাকাছিই রাখতে উদ্যোগী আইডি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement