স্বপনকুমার দাস
বিসর্জনের ডিউটি সেরে মোটরবাইকে চেপে থানার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু থানায় আর ঢোকা হয়নি। তার কিছুটা আগেই মোটরবাইকের পিছনে আচমকাই ধাক্কা মারে একটি মালবাহী গাড়ি। ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন বছর আটত্রিশের কনস্টেবল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পানিহাটিতে। পুলিশ জানায়, খড়দহ থানায় কর্তব্যরত ওই কনস্টেবলের নাম স্বপনকুমার দাস (৩৮)। তাঁর বাড়ি বজবজের আর এন ঘোষ রোডে। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী সুমিতা ও নয় বছরের ছেলে আরুষ। আচমকা স্বামীর মৃত্যুর খবরে বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সুমিতা। স্বপনের আত্মীয়েরা এ দিন থানায় এলেও কেউ কোনও কথা বলতে চাননি। বছর দু’য়েক আগে নিমতা থানা থেকে খড়দহে বদলি হয়ে আসেন স্বপন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পানাহাটির মহোৎসবতলা ঘাটে তাঁর ভাসানের নিরাপত্তার ডিউটি ছিল। সেখান থেকে রাত পৌনে ১২টা নাগাদ তিনি একাই মোটরবাইকে চেপে থানার দিকে রওনা দেন। তিনি সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন, রাস্তা থেকে খাবার কিনে নিয়ে ব্যারাকে ফিরবেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, খড়দহ থানা থেকে কিছুটা দূরেই বি টি রোডের উপরে প্রফুল্ল সিনেমা হলের কাছে আচমকাই ওই কনস্টেবলের বাইকের পিছনে ধাক্কা মারে একটি মালবোঝাই গাড়ি। ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন স্বপন। মাথায় হেলমেট থাকলেও সেটি ছিটকে চলে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় কয়েক জন। তাঁরাই খবর দেন থানায়। পুলিশ কর্মীরা ও স্থানীয়েরা মিলে স্বপনবাবুকে নিয়ে যান কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে রাতেই খড়দহ ছাড়াও অন্য থানা থেকে স্বপনের সহকর্মীরা হাসপাতালে চলে আসেন। চিকিৎসকেরা জানান, মাথা ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পেয়েছিলেন ওই কনস্টেবল। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, স্বপন কখনই জোরে মোটরবাইক চালাতেন না। তাঁর বাইকটি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে পিছন থেকে কত জোরে বেপরোয়া গাড়িটি ধাক্কা মেরেছিল। বাইক থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিটকে গিয়ে পড়েছিলেন ওই পুলিশকর্মী। ঘটনার পরেই গাড়ি নিয়ে চম্পট দিয়েছে চালক। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছি। ওই গাড়িটি চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ স্বপনের আকস্মিক মৃত্যুতে খড়দহ থানার পুলিশকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ওই কনস্টেবলই থানার বাহিনীর ডিউটি ভাগের দায়িত্বে ছিলেন। শনিবার ময়না-তদন্তের পরে স্বপনের দেহ থানায় এনে সম্মানজ্ঞাপনের পরে পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।