—প্রতীকী চিত্র।
মাথায় নেই হেলমেট। কানে মোবাইল ফোন। এ ভাবে ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্য করে এগিয়ে যাওয়া এক মোটরবাইক চালককে আটকেছিলেন এক ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মী। এর পরেই জরিমানা করা নিয়ে শুরু হয় উভয় পক্ষের বচসা। ওই পুলিশকর্মী ওই বাইকচালককে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অন্য দিকে, ওই পুলিশকর্মী অভিযোগ করেন, তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বাইকচালক। কিন্তু দক্ষিণ শহরতলির ওই ঘটনার তদন্তে নেমে দেখা যায়, অভিযুক্ত ওই পুলিশকর্মীর দেহে থাকা বডি ক্যামেরায় পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েনি। কারণ, ক্যামেরার মেমারিতে জায়গা না থাকায় পুরো ঘটনার ভিডিয়ো রেকর্ডিংই হয়নি বলে অভিযোগ।
লালবাজার সূত্রের খবর, বডি ক্যামেরায় যাতে পুরো ঘটনা রেকর্ডিং করা হয়, তার জন্য একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ বা এসওপি জারি করা হয়েছে ট্র্যাফিক বিভাগের তরফে। যা ট্র্যাফিক গার্ডের প্রতিটি অফিসার এবং পুলিশকর্মীকে মেনে চলতে বলা হয়েছে। গত শনিবার ১০ দফা ওই এসওপি প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডকে পাঠানোও হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও বডি ক্যামেরা নিয়ে এসওপি জারি করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, দক্ষিণ শহরতলির ঘটনাটির মতো অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, সেই এসওপি মেনে চলছেন না পুলিশকর্মীরা। তাই ট্র্যাফিক বিভাগের তরফে ফের এসওপি জারি করা হয়েছে।
লালবাজার জানিয়েছে, কাজের সূত্রে যে কোনও কথোপকথন বা ঘটনার সময়ে বডি ক্যামেরা অন রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতিদিনের কাজের শেষে ট্র্যাফিক বিভাগের প্রতিটি পুলিশকর্মীকে ট্র্যাফিক গার্ডের নির্দিষ্ট হার্ড ডিস্কে দিনের ভিডিয়ো ফুটেজ সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। বডি ক্যামেরায় রেকর্ড করে রাখা ওই ভিডিয়ো ফুটেজ ছ’মাস সেখানে সংরক্ষণ করে রাখতে বলা হয়েছে। ছ’মাস পরে উপ নগরপালের অনুমতি নিয়ে গার্ডের ওসি ওই সংরক্ষিত ভিডিয়ো ফুটেজ ডিলিট করতে পারবেন। তবে কার নির্দেশে, কোন দিনের ভিডিয়ো ফুটেজ ডিলিট করা হচ্ছে, তা জেনারেল ডায়েরির মাধ্যমে নথিভুক্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে নতুন এসওপিতে।
ট্র্যাফিক বিভাগের এক পুলিশ কর্তা জানান, ওই এসএপি পুলিশকর্মীরা মেনে চলছেন কি না, তা দেখার জন্য এসি পদমর্যাদার অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মাসে এক বার সব কিছু খতিয়ে দেখবেন এবং উপ নগরপালকে রিপোর্ট দেবেন। নতুন এসওপিতে বলা হয়েছে, কাজের শুরুতেই পুলিশ অফিসার ও কর্মীরা তাঁর বডি ক্যামেরার মেমারিতে জায়গা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন। এ ছাড়া, ওই বডি ক্যামেরা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে নিতেও বলা হয়েছে। পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, কোনও বডি ক্যামেরা ঠিক মতো কাজ না করলে তা উচ্চপদস্থ কর্তাদের জানাতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তা নিয়ে জেনারেল ডায়েরিও করতে বলা হয়েছে। কোনও ভাবেই ওই বডি ক্যামেরার ভিডিয়ো ফুটেজ ডিলিট বা এডিট করা যাবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ওই ফুটেজ যাতে কোনও ভাবে অফিসের কাজের বাইরে না যায়, সেই সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিটি বডি ক্যামেরায় কয়েক ঘণ্টার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা যায়। ওই বডি ক্যামেরা ব্যবহারের ফলে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের দ্রুত মীমাংসা করা সম্ভব হচ্ছে বলেও সূত্রের দাবি।