ফাইল চিত্র।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে বার বার। অথচ তিনি আচরণ বদলাচ্ছেন না। কী ভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন এসএসকেএম হাসপাতালের ওই মহিলা আধিকারিক? এই প্রশ্ন ঘুরছে হাসপাতালের অন্দরেই। কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, উডবার্ন ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই আধিকারিকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জেরে ভোগান্তি হচ্ছে রোগীর পরিজনদের। আরও অভিযোগ, একাধিক চিকিৎসক, এমনকি বিভাগীয় প্রধানও বিভিন্ন সময়ে অসম্মানিত হয়েছেন তাঁর ব্যবহারে।
সূত্রের খবর, গত প্রায় তিন বছর ধরে এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার পদে রয়েছেন ওই আধিকারিক। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে একাধিক আধিকারিক নিযুক্ত থাকেন। তাঁদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই। শুধু এসএসকেএম হাসপাতালেই মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার রয়েছেন জনা পাঁচেক। তাঁদেরই এক জন পায়েল দত্ত নামে ওই অভিযুক্ত আধিকারিক। অভিযোগ, উডবার্ন ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই আধিকারিকের ব্যবহারে বিরক্ত চিকিৎসকদের একাংশও। মাস তিনেক আগে এসএসকেএমেরই এক বিভাগীয় প্রধান এক রোগিণীর আত্মীয়কে পাঠিয়েছিলেন উডবার্ন ব্লকে ভর্তির ব্যাপারে প্রাথমিক কথা বলতে। অভিযোগ, সেই আত্মীয়কে তীব্র ভর্ৎসনা করেন পায়েল। সম্প্রতি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রোগীর পরিজনের দিকে ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে পায়েল বলেন, ‘‘যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা। বরং আমি দাঁড়িয়ে থেকে রোগী ভর্তি করি।’’
তবে অন্য এক চিকিৎসকের অভিযোগ, “ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার কখন নিজের আসনে থাকেন জানি না। উডবার্নে ভর্তি করতে গিয়ে রোগীর পরিজনেরা অনেক সময়ে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করেও তাঁকে না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। বাধ্য হয়ে তখন ডেপুটি সুপারের কাছে পাঠাই। বহু ক্ষেত্রে তিনিই উডবার্ন ব্লকে রোগীকে ভর্তি করিয়ে দেন।”
অভিযোগ, মাস তিনেক আগের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের নাম করে ওই আধিকারিক রোগীর আত্মীয়কেই বলেছিলেন, ‘‘আশ্চর্য! উনি কেন আমার কাছে যাকে তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। যা বলার তো ডাক্তারবাবুকেই বলে দিয়েছি!’’
লিভারে জল জমার সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি বাগুইআটির গায়ত্রী দাসকে তাঁর পরিবার এসএসকেএমে নিয়ে যায়। রোগিণীর পুত্রবধূ লক্ষ্মী দাসের দাবি, “লাল প্রশাসনিক বিল্ডিংয়ের একতলার বাঁ দিকে পর পর কয়েকটি ঘর আছে। প্রথম ঘরে ঢুকে এক জন ম্যাডামকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ও আউটডোরের ডাক্তারের ভর্তির পরামর্শ দেখালে তিনি রেগে আঙুল তুলে বলে ওঠেন, ‘এই সব কার্ড আমাকে দেখাবেন না। শয্যা নেই। এই সব কার্ডে কী হবে! আমরা কি শয্যা তৈরি করব?’ বলেই ওই ম্যাডাম কার্ডটা আমার দিকে টেবিলের ও প্রান্ত থেকে ছুড়ে দেন।”
কী বলছেন পায়েল? অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, ওই নামের কোনও রোগীর আত্মীয়ের সঙ্গে কথাই বলেননি তিনি। যদিও হাসপাতালের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সে দিনের দুর্ব্যবহারের ঘটনায় জড়িত পায়েলই।
সমস্ত অভিযোগ শুনে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সৈয়দ জিয়াউল মুস্তাফা আলকাদেরী বলেন, “হ্যাঁ, কিছু অভিযোগ আসছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এমন কিছু ঘটে থাকলে সত্যিই নিন্দনীয়। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে সতর্ক করে দেব। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলব।”
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “সংগঠনের তরফে আমাদের জানানো হলে অবশ্যই দেখা হবে। কারণ রোগীর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের নির্দিষ্ট অভিযোগ উঠলে তা বরদাস্ত করা হবে না।”