প্রতীকী চিত্র
প্রতিবারের মতো এ বারও ক্লাসে প্রথম হয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীটি। তবু মার্কশিটে থাকা প্রাপ্ত নম্বর নিজেই বাড়িয়ে নিয়েছিল সে। যে কারণে শুক্রবার স্কুলে প্রকাশ্যেই ভর্ৎসিত হতে হয় বাঁশদ্রোণীর কালীতলা পার্কের বাসিন্দা ওই ছাত্রীকে। এর পরে শনিবার সকালেই উদ্ধার হল তার ঝুলন্ত দেহ।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার বাবা পেশায় রিকশাচালক। অভাবের সংসারে ছোট মেয়েটি পড়াশোনায় ভাল ছিল। সে জন্য বাবার অনুরোধে এক ‘সহৃদয়’ প্রবীণ বাঁশদ্রোণীর চাকদহ বিদ্যামন্দিরের ওই ছাত্রীকে পড়াতেন। পরিমলেন্দু সিংহরায় নামে ওই প্রবীণকে ছাত্রীটি জেঠু বলে ডাকত। এ দিন ওই স্কুলছাত্রীর খাতায় সেই জেঠুর উদ্দেশ্যে লেখা একটি চিঠি উদ্ধার হয়েছে। তাতে শুক্রবারের ভর্ৎসনার প্রসঙ্গ টেনে লেখা রয়েছে, ওই স্কুলে সে আর পড়তে চায় না। চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী, মার্কশিটে পেন বোলানোর বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং এক জন করণিক জানতেন। ওই ঘটনার পরে মার্কশিট সংশোধনও করা হয়েছিল। তার পরেও প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে নতুন ক্লাসে ছাত্রীটিকে ভর্তি নেওয়া হয়নি।
প্রধান শিক্ষক গিরিশ সাউ জানিয়েছেন, তিনি শুক্রবার স্কুলেই ছিলেন। ভর্ৎসনার অভিযোগ ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘মেধাবী ছাত্রীটিকে পুরস্কৃত করার জন্য মার্কশিট চেয়েছিলাম। তখনই দেখি, মার্কশিটে প্রাপ্ত নম্বর কেটে সে নিজেই নম্বর বসিয়েছে! বড় হাতের অক্ষরে ইংরেজিতে লিখেছে ‘ফার্স্ট’। কে করেছে জানতে চাওয়ায় বলল, জেঠু করেছেন। জেঠুকে ডেকে আনতে বলা হয়। কিন্তু মেয়েটি আর স্কুলে আসেনি।’’
এ দিন পরিমলেন্দুবাবু বলেন, ‘‘সকালে আমাকে চা দিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। দরজা ভেঙে দেখি, দেহ ঝুলছে।’’ ক্লাসে প্রথম হয়েও মার্কশিটে নম্বর বাড়াতে গেল কেন? প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, সেটা তাঁরাও বুঝতে পারছেন না। পরিমলেন্দুবাবুর বক্তব্য, ‘‘হয়তো ভেবেছিল, কম নম্বর পাওয়ার জন্য আমি বকব।’’ কিন্তু সামান্য বকুনির জন্য এত বড় পদক্ষেপ? ভাল নম্বর পেয়েও অসৎ উপায় অবলম্বনেরই বা কী ব্যাখ্যা?
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চাপে আরও ভাল করার চাহিদা থেকে এটা হতে পারে।’’