প্রতীকী ছবি।
জাতিগত শংসাপত্র পেতে জমা দেওয়া হলফনামায় সই করা নিয়ে বিচারক ও আইনজীবীদের দ্বন্দ্ব চলছে ১০ দিন ধরে। কর্মবিরতির পথে গিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। এর জেরে কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বারুইপুর আদালতে। অভিযোগ, আদালতের মূল গেট বন্ধ করে দিয়েছেন আইনজীবীরা। বড় অপরাধ ছাড়া অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করার জন্য পুলিশকেও আইনজীবীদের তরফে অনুরোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
কী নিয়ে দ্বন্দ্ব? জানা গিয়েছে, জাতিগত শংসাপত্রের জন্য বিভিন্ন আইনজীবী তাঁদের মক্কেলদের হলফনানা জমা দিয়েছেন। কিন্তু বহু হলফনামা বাতিল করেছেন বিচারক। তা নিয়েই গোলমাল বলে দাবি সরকারি আইনজীবীদের একাংশের।
বারুইপুর আদালত আলিপুর জেলা বিচারকের অধীনে। আদালত সূত্রের খবর, সেখানে তিন জন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক ও এক জন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক রয়েছেন। ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারকের পদ ফাঁকা প্রায় এক বছর। তিন জনের মধ্যে এক জন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকই জাতিগত শংসাপত্রে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিচারককে শুনানির পাশাপাশি হলফনামা পরীক্ষা করার পরেই স্বাক্ষর করতে হয়। এতে সময়ের অভাব হচ্ছে। তা ছাড়া হলফনামার বয়ান সন্দেহজনক বলে বাতিল করা হচ্ছে।
গত বুধবার জেলা বিচারকের কয়েক জন প্রতিনিধি আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করলেও রফাসূত্র বেরোয়নি। আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, রিপোর্ট জেলা বিচারকের দফতরে পাঠানো হয়েছে।
১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতে প্রথম জনগণনা হয়েছিল। আইনজীবীদের বক্তব্য, বিচারপ্রার্থীদের অধিকাংশই ১৯৫০ সাল থেকে পূর্বপুরুষের বসবাসের তথ্য দিয়ে ভারতের নাগরিক দাবি করে হলফনামা দিয়েছেন। আদালত সূত্রের খবর, ওই বিবৃতি মিথ্যা হলে ভারতীয় কার্যবিধির ২৯৭ ধারায় আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে বিচারক সই করেন। সেখানে স্বাক্ষর করা নিয়েই সমস্যা বিচারকের।
বিচারকের ওই ভূমিকা নিয়েই সরব আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, দিনে ২০০-২৫০টি হলনামা জমা পড়ছে, অথচ বিচারক ৯০-১০০টিতে সই করছেন। ফলে দৈনিক প্রচুর হলফনামা বিনা স্বাক্ষরে জমে থাকায় তা ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে জমা দেওয়া যাচ্ছে না। এর জেরে অনেকেই শংসাপত্র পাচ্ছেন না। আইনজীবীদের দাবি, গত কয়েক মাসে এমন দু’-আড়াই হাজার হলফনামা জমে গিয়েছে। আইনজীবীদের অভিযোগ, ওই বিচারক বাংলায় সড়গড় নন। মামলার আবেদন বাংলায় করলে তিনি বুঝতে না পারায় বহু জামিন মঞ্জুর হয় না। বারুইপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘হলফনামা-সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এই কর্মবিরতি। আশা করি, আলোচনায় সমাধান হবে।’’
বারুইপুর পুলিশ জেলার সোনারপুর, নরেন্দ্রপুর, বারুইপুর, জয়নগর, কুলতলি, ভাঙড়, কাশীপুর থানার ফৌজদারি ও দায়রা মামলার শুনানি বারুইপুর আদালতেই হয়। সরকারি আইনজীবী জানান, ওই সব থানা এলাকার প্রায় হাজার দশেক মামলার শুনানি বন্ধ। অসুবিধায় পুলিশও। এক পুলিশকর্তা জানান, ‘‘অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আবার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী পুরনো মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানার শুনানিও হচ্ছে না। অথচ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেগুলির নিষ্পত্তির নির্দেশ রয়েছে।’’