Chingrighata

চিংড়িঘাটা-কাণ্ডে মৃত্যু মহিলার, সঙ্কটজনক আরও এক জন

ঘটনায় ধৃত, গাড়ির চালক সমুদ্র বিশ্বাসকে শুক্রবার পাঁচ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিধাননগর এসিজেএম আদালতের বিচারক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:০২
Share:

এই সেই গাড়ি। ছবি সংগৃহীত।

মাকে সঙ্গে নিয়ে ছেলে এসেছিলেন পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষার পরে এক আত্মীয়ের বাড়ি ঘুরে ফেরার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে মা ও ছেলে যখন রাস্তায়, সেই সময়ে বেপরোয়া গাড়িটি এসে ধাক্কা মেরেছিল। গাড়ির সঙ্গে বেশ খানিকটা হিঁচড়ে চলে যান মা। সেই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন ছেলে। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষরক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হল মা খুকু গায়েনের (৪৭)। অন্য দিকে, ওই ঘটনায় ধৃত, গাড়ির চালক সমুদ্র বিশ্বাসকে শুক্রবার পাঁচ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিধাননগর এসিজেএম আদালতের বিচারক। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির গোড়াহার গোসাঁইচক গ্রামের বাসিন্দা খুকুর পাঁজরের হাড় তো ভেঙেইছিল, ডান পা ও বাঁ হাতও ভাঙে। ডান পায়ে চোট লেগেছে খুকুর ছোট ছেলে সন্দীপের। নিউ টাউনের টিসিএস গীতবিতানে সরকারি চাকরির (এসএসসি সিজিএল) পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে রাস্তায় মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন সন্দীপ। আচমকাই বেপরোয়া গাড়িটি এসে তাঁদের ধাক্কা মারে। এ দিন ময়না তদন্তের শেষে, সন্ধ্যার পরে মায়ের দেহ নিয়ে খেজুরি ফিরে যান সন্দীপ। তিনি বলেন, ‘‘সরকার যদি ক্ষতিপূরণ দেয়, তবে অনুরোধ করব, একটা চাকরি দিতে। মায়ের ইচ্ছে ছিল, আমি সরকারি চাকরি করি। সেই কারণেই পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। মাকে এ ভাবে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ভাবিনি।’’

বিধাননগর পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের ওই দুর্ঘটনায় খুকুর মতো গুরুতর আঘাত পেয়েছেন পারশনাথ মৃধা নামে আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা এক ব্যক্তিও। তিনি সল্টলেকের জে সি ব্লকের একটি আবাসনের নিরাপত্তাকর্মী। ঘটনার সময়ে সাইকেল নিয়ে পারশনাথ চিংড়িঘাটা মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। গাড়ির ধাক্কায় তিনি শূন্যে বেশ কয়েক ফুট উঠে পাক খেতে খেতে মাটিতে পড়েন। পারশনাথ এসএসকেএমে ভর্তি। তাঁরও অবস্থা সঙ্কটজনক।

Advertisement

ঘটনার সময়ে চিংড়িঘাটা মোড় হয়ে বাইপাস ধরে স্কুটারে চেপে যাচ্ছিলেন নৃত্যশিল্পী পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পিছনের আসনে বসে ছিলেন পেশায় ইভেন্ট ম্যানেজার প্রীতম পাল। বৃহস্পতিবার রাতে দু’জনকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হলেও তাঁদের সম্পূর্ণ সেরে উঠতে সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে। সোনারপুরের বাসিন্দা প্রীতম জানান, পারমিতার পায়ের হাড়ে চিড় ধরেছে। তাঁর শরীরের পিছনের দিকের অংশের ছাল উঠে গিয়েছে। প্রীতম বলেন, ‘‘স্কুটার-সহ আমাদের বেশ কিছুটা হিঁচড়ে নিয়ে যায় গাড়িটি। স্কুটারটি পারমিতার পায়ের উপরে পড়ে। এ দিন সরকারের লোকজন আমার বাড়িতে দেখা করতে আসেন। আমি তাঁদের অনুরোধ করি, চিংড়িঘাটার সিগন্যালে যেন সব সময়ে সতর্ক ট্র্যাফিক ব্যবস্থা রাখা হয়। ক্ষতিপূরণ নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’’ ওই দিনের ঘটনায় যে এসইউভি গাড়িটি উল্টে গিয়েছিল, তাতে বর-কনে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন বলে খবর। কারও আঘাত গুরুতর নয়। তবে পুলিশ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।

এ দিকে, বৃহস্পতিবার গ্রেফতারির পরে এ দিন বিধাননগর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয় অভিযুক্ত চালক সমুদ্রকে। পুলিশের তরফে তাঁকে সাত দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। সরকারি আইনজীবী সাবির আলি বিচারক শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়কে জানান, ওই দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যেই এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এক জন সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছেন। তাই আসামিকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। সমুদ্রের আইনজীবী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা আবেদন করেন, তাঁর মক্কেলের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ কমাতে। বিচারক পাঁচ দিনের জন্য অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement