মশাবাহিত রোগে প্রথম স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। প্রতীকী ছবি।
মশাবাহিত রোগে প্রথম স্থানে রাজ্য!
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জাতীয় ভেক্টরবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজ়িজ় কন্ট্রোল প্রোগ্রাম) পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত বছরে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সব থেকে বেশি ঘটনা ঘটেছে এ রাজ্যে। চলতি বছরে সেই পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের ঘরে পৌঁছেছে।
কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর রাজ্যে ৬৭ হাজার ২৭১ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় ৩০ জনের। অন্য দিকে, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার ৫৬৩। মৃত্যু হয় তিন জনের। যদিও বেসরকারি সূত্রে এই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও অনেকটাই বেশি বলে দাবি স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের। শহরের এক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘২০২০-’২১ সালে পর পর দু’বছর করোনার কারণে ডেঙ্গি খুব একটা মাথাচাড়া দেয়নি। কিন্তু গত বছর রাজ্যে মারাত্মক প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। ডেঙ্গিতে একের পর এক মৃত্যু লেগেই ছিল। তাই মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর রাজ্যের মধ্যে কলকাতা পুর এলাকাতেই ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছিল সব থেকে বেশি। ডেঙ্গি পজ়িটিভ হয়েছিলেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার জন। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৪ হাজার। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বর্ষা আসতে এখনও দেরি থাকলেও রাজ্যে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১২৩০। তবে, মৃত্যুর কোনও খবর মেলেনি। আর ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬৬০। এই দুই রোগের ক্ষেত্রেই আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। কারণ, প্রায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগেই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যাঁদের একটি বড় অংশের ডেঙ্গি পজ়িটিভ আসছে।
তবে, পরীক্ষা বেশি হওয়ার কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি আসছে বলে দাবি স্বাস্থ্যকর্তাদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ১০৬টি সরকারি হাসপাতাল এবং পুরসভা স্তরে প্রায় ২৫০টি জায়গায় ডেঙ্গি পরীক্ষার বন্দোবস্ত রয়েছে। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব সকলকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ভেক্টর কন্ট্রোলের জন্য সমস্ত পুরসভা ও পঞ্চায়েতকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অনেক জায়গায় সেই মতো খাল, নিকাশি নালা পরিষ্কার করা হচ্ছে।’’ কিন্তু পুরোপুরি বর্ষা আসার আগে মাত্র পাঁচ মাসেই যদি ১২০০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন, তা হলে আগামী দিনে পরিস্থিতি কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা বোঝা যাচ্ছে বলেই মত চিকিৎসকদের একাংশের।
পরিস্থিতি যে ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে কলকাতার ছবিটা দেখলেই। গত জানুয়ারি থেকে ১ মে পর্যন্ত শহরে ৮৩ জন ডেঙ্গি এবং ৩৬৫ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্টেও মশাবাহিত রোগের প্রকোপের ক্ষেত্রে কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার উল্লেখ রয়েছে। আরও জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন এ রাজ্যে। সেই বছরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৭৪৬। তার পরে ফের ২০২২ সালে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছুঁয়ে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গ। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশ হিসাবে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। এবং বিভিন্ন এলাকায় তিন-চার বছর অন্তর ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব ফিরে আসবে। তাই বর্ষার আগেই পতঙ্গবিদদের দিয়ে সমীক্ষা, মশা মারার কাজ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচিতে জোর দিতে হবে।’’