প্রতীকী ছবি।
অঙ্গদানের প্রবণতায় বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় এখনও শৈশবে ভারত। সেই তথ্যের সপক্ষে হিসেবটা এ রকম, প্রতি ১০ লক্ষ হিসেবে ৪৭ জন যেখানে স্পেনে, ৩২ জন আমেরিকায়, ৩০ জন ইউরোপে, চিনে ৪ জন অঙ্গদান করে থাকেন। ভারতে সেখানে প্রতি ১০ লক্ষে করেন এক জন! হিসেব বলছে, ২০১৩ সালে দেশে ৩১৩ জন অঙ্গদান করেন। প্রতি বছর সেই সংখ্যাটা বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। বলছেন অঙ্গদান প্রক্রিয়ায় যুক্ত অনেকেই।
স্বভাবতই অঙ্গদানের এই ঘাটতির জন্য অনেক পিছিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াও। দেশের মধ্যে তামিলনাড়ু অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপনে এগিয়ে। দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা বাধ্যতামূলক, অঙ্গ আনতে গ্রিন করিডর, প্রতিস্থাপনের নির্দেশিকার যথার্থ প্রয়োগ এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রতীক্ষায় থাকা রোগীর তালিকা কেন্দ্রীভূত করাই তাদের এই সাফল্যের কারণ বলে মানছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ।
চিকিৎসকদের মতে, অঙ্গ প্রতিস্থাপন বাড়াতে উপযুক্ত পরিষেবা তৈরি করা যতটা জরুরি, তার থেকেও জরুরি অঙ্গদানের প্রবণতা বৃদ্ধি। সেই কাজে মূল বাধা পরিবারের অসম্মতি। সামাজিক বা ধর্মীয় গোঁড়ামির পাশাপাশি পরিজনের শরীর কাটাছেঁড়া করতে না চাওয়ার মানসিকতাও বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
স্কুল-কলেজ স্তর থেকে এ বিষয়ে সচেতনতার প্রচারে জোর দিতে হবে বলে জানাচ্ছেন অঙ্গদানে যুক্ত অনেকেই। এডস সচেতনতায় ‘বুলাদি’র মতো কোনও মুখ এই কাজ সহজ করতে পারে বলে মত একাংশের। টেক্সাস নিবাসী চিকিৎসক ভারত ভূষণের আবার বক্তব্য, অঙ্গদানের সিদ্ধান্তকে প্রসারিত করতে পারে ‘পেশেন্টস সেলফ ডিটারমিনেশন অ্যাক্ট’ (পিএসডিএ)। আমেরিকায় ১৯৯১-এর ডিসেম্বর থেকে এই আইন কার্যকর। স্পেন-সহ একাধিক ইউরোপের দেশে রয়েছে এই আইন। হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা হেলথ কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসাধীন পূর্ণবয়স্ক রোগী এই আইনের আওতায় পড়েন। নিজের চিকিৎসায় কত দূর এবং কী পদ্ধতি নেওয়া হবে এবং মৃত্যু পরবর্তী অঙ্গদানের বিষয়েও তিনি ওই আইন বলে জানাতে পারবেন। সম্প্রতি দিল্লি এসে অনাবাসী ভারত ভূষণ এবং অরুণ চৌধুরী-সহ এক চিকিৎসক দল পিএসডিএ-কে আইনের রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
যদিও এই আইন সম্পর্কে জানেন না বেশিরভাগ চিকিৎসকই। পিএসডিএ আইন হওয়ার আগে এ সম্পর্কে আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্কের পক্ষে ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “বিষয়টি ভাল। কিন্তু এর দু’দিকই দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এ দেশের পরিকাঠামোয় তা কতটা কার্যকর।’’ এই আইনের পক্ষে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী বলছেন, “ভবিষ্যতের কথা ভেবে সরকারি স্তরে চিন্তাভাবনা এখনই শুরু করা যেতেই পারে।” তবে এই আইন অজানা স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের অনেকের কাছেই।