আরজি কর হাসপাতালে ইন্টার্নদের প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।
শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন চলতে পারে, কিন্তু কোনও অবস্থাতেই রোগী পরিষেবা ব্যাহত করা যাবে না। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অচলাবস্থা নিয়ে জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার এমনই জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে অনশন তুলে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে আদালত। আন্দোলনে যুক্ত ইন্টার্নেরা আদালতে জানিয়েছেন, আজ, মঙ্গলবার থেকে তাঁরা কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থেকে অনশন চলবে বলেও সোমবার রাতে জানান আন্দোলনকারীরা।
আর জি করের অচলাবস্থা নিয়ে সম্প্রতি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন নন্দলাল তিওয়ারি নামে এক ব্যক্তি। এ দিন হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলা ওঠে। রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়, কোনও আন্দোলন, স্লোগান যেন হাসপাতাল চত্বরে না হয়। দুপুরে আন্দোলনকারীদের আইনজীবী জানান, ইন্টার্নেরা কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত, তবে হলফনামা দিয়ে তাঁরা সমস্যার কথা জানাতে চান। আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা আদালতে জানান, তাঁদের অনশনের জায়গায় রোগীদের পরিজনেরা যান না। কিন্তু সেখানে কোনও মাইকিং করা যাবে না বলেও জানিয়ে দেন বিচারপতি। পড়ুয়া-চিকিৎসকেরা কাকে তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে চান, তা-ও জানতে চান তিনি। আন্দোলনকারীরা জানান, মেন্টর কমিটিতে শিক্ষক-চিকিৎসকদের উপরে ভরসা নেই তাঁদের। তাই রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবকে পুরো বিষয়টি জানাতে চান পড়ুয়ারা। আদালত আগামী ২৯ অক্টোবর সকাল ১১টায় স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পরবর্তী শুনানি ২ নভেম্বর।
এ দিন বিচারপতি জানতে চান, রোগী পরিষেবার কী হবে? তিনি বলেন, ‘‘রোগী ভর্তি করার চেয়ে বেশি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেই রেকর্ড চাওয়া হলে তা কি আন্দোলনকারীদের পক্ষে ভাল হবে? চাপে তো সবাই আছি। তার জন্য কাজ বন্ধ কি ঠিক?’’
উত্তরে ইন্টার্নদের তরফে দাবি করা হয়, শুধু তাঁদের জন্য কাজের ক্ষতি হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। টানা ২২ দিন অনশনের পরেও সরকারের হেলদোল নেই। তাই তাঁরা স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলতে চান। তখন বিচারপতি অনশন তুলে নিতে বলেন পড়ুয়াদের। তিনি বলেন, ‘‘২৯ অক্টোবর অনেক দেরি আছে। জীবনরক্ষাই ইন্টার্নদের মূল উদ্দেশ্য, সেটি নষ্ট হচ্ছে।’’ বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত পড়ুয়াদের বলেন, ‘‘আপনাদের প্রতিবাদ করতে বারণ করিনি। আগামী দিনে অনেক বড় হবেন। কিন্তু আপনারা আপাতত অনশন তুলে নিন।’’ কিন্তু অধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে সরকারকে চাপে রাখতে তাঁরা অনশন করতে চান বলেই জানিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
এ দিন দুপুর থেকে শুরু করে রাতেও অনশন মঞ্চের সামনে এক গণকনভেনশনের আয়োজন করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে চিকিৎসক ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত না থাকলেও অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, বাদশা মৈত্র, অনীক দত্তেরা লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন বলেও জানান আন্দোলনকারীরা। হাজির ছিল কয়েকটি চিকিৎসক সংগঠনও। ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, “এত দিন ধরে আন্দোলন চলছে। সরকারের উচিত ছিল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়া। তা না করে তারা চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে।”
আর জি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ বলেন, “সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি ও বাইরের চিকিৎসকদের একাংশ এক পক্ষের কথা শুনে বিচার করছেন। নেপথ্যের ঘটনা জানার চেষ্টা করলে ভাল করতেন। সরকারি পদে থেকে সবটা কনভেনশন করে প্রকাশ্যে বলা সম্ভব হচ্ছে না আমার পক্ষে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যা জানানোর জানিয়েছি। এ বার আমায় রাখবেন না বদলি করবেন, সেই সিদ্ধান্ত তাঁরাই নেবেন।”