market

পুজোর মুখে লক্ষ্মীলাভ নামমাত্র, মিছিল-সভা বন্ধের আর্জি

রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ব্যবসায়ীদের বড় অংশের অনুরোধ, পুজোর আগের কেনাকাটার এই সময়ে অন্তত রাস্তা আটকে কর্মসূচি বন্ধ হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:২১
Share:

শহরে পুজোর আগের কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লেগেছে মঙ্গলবার, বিজেপির নবান্ন অভিযানের দিন। ফাইল ছবি

রাজনৈতিক দলের মিছিল, সভা, বিক্ষোভ-অভিযান যেন শেষই হচ্ছে না! এতেই এই বছর সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পুজোর বাজারের বিক্রেতা থেকে হকারেরা। তাঁদের অনেকেরই দাবি, হাতিবাগান, ধর্মতলা, গড়িয়াহাটের মতো বাজারে সারা বছর যে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয়, তার অন্তত ৩০-৩৫ শতাংশ হয় পুজোর মুখে এই সময়ে। গত দু’বছরের করোনার খরা কাটিয়ে চলতি বছরে বিক্রি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু বছরের মোট ব্যবসার ৩০ শতাংশ তো দূর, পাঁচ শতাংশও হচ্ছে কি না সন্দেহ। যার জন্য রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ব্যবসায়ীদের বড় অংশের অনুরোধ, পুজোর আগের কেনাকাটার এই সময়ে অন্তত রাস্তা আটকে কর্মসূচি বন্ধ হোক। যদিও এই অনুরোধ কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেই আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে আগামী কয়েক দিনও একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায়। এরই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের চিন্তা বাড়াচ্ছে পর পর নিম্নচাপের জেরে হওয়া বৃষ্টিও।

Advertisement

জানা যাচ্ছে, শহরে পুজোর আগের কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লেগেছে মঙ্গলবার, বিজেপির নবান্ন অভিযানের দিন। সে দিন মহাত্মা গান্ধী রোড বন্ধ থাকায় কলেজ স্ট্রিটের ব্যবসায়ী এবং হকারেরা ভুগেছেন তো বটেই, বড়বাজারের বহু ব্যবসায়ীও দোকানই খুলতে পারেননি বলে অভিযোগ। সুমন সোনকর নামে এক পোশাক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘করোনার দু’বছর নয় বাদ দিলাম। তার আগে পুজোর মুখে এই সময়ে দিনে অন্তত ৪০-৫০ হাজার টাকার বিক্রি হত। এই বছরও শুরুটা ভাল হয়েছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার মাত্র চার হাজার টাকার ব্যবসা করেছি।’’ রঞ্জিত কুমার নামে বড়বাজারের আর এক ব্যবসায়ীর মন্তব্য, ‘‘এক সময়ে এমন ঝামেলা শুরু হল যে, দোকান বন্ধ করে প্রায় পালাতে বাধ্য হলাম। ফিরে আসার পরে আর লোক হয়নি। মাত্র ৪০০ টাকার বেচাকেনা করেছি সে দিন।’’ একই রকম দাবি কলেজ স্ট্রিটের একটি শাড়ির দোকানের মালিক সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার বর্ণপরিচয় বাজারে অনেক দোকান তো বউনিই করতে পারেনি। এই সময়ে আমাদের প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়। সেখানে ওই দিন ব্যবসা হয়েছে ১২ হাজার টাকার।’’

বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিটের পরে মঙ্গলবার সবচেয়ে ভুগেছে ধর্মতলা। সেখানকার হগ মার্কেট ইউনিয়নের সদস্য তুলসী সিংহ বললেন, ‘‘সারা বছর ধর্মতলায় মোটামুটি ২০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। তার অন্তত ২০ শতাংশ আসে পুজোর আগের এই সময়ে। এ বার তিন শতাংশও সেই ব্যবসা হয়েছে কি না সন্দেহ।’’ তাঁদের দাবি, শুধু মঙ্গলবারেই নয়, ধর্মতলাকে ভুগতে হয়েছে তার পরের দু’দিনও। বুধবার একটি রাজনৈতিক দলের মিছিল কলেজ স্ট্রিট থেকে ডোরিনা ক্রসিং হয়ে গিয়েছে। তার জেরে সে দিন চৌরঙ্গি এলাকার রাস্তায় প্রবল যানজট ছিল। এতে ক্রেতার সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনই অনেকের ব্যবসা মার খেয়েছে। বৃহস্পতিবার আবার পুর ভবনে শূন্য পদে নিয়োগের দাবিতে বাম ছাত্র-যুবদের পুরসভা অভিযান ছিল। অভিযোগ, তার জন্যও নিউ মার্কেটের ব্যবসা ভীষণ ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। ধর্মতলার এক ব্যবসায়ী সুকান্ত হীরার দাবি, ‘‘বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি শেষ হয়ে যাওয়ারও প্রায় দু’ঘণ্টা পরে বিকেল চারটে নাগাদ আমি প্রথম ক্রেতা পাই। এই ভাবে চললে তো না খেয়ে মরতে হবে।’’ গড়িয়াহাট চত্বরে মিছিল-সমাবেশের প্রভাব তেমন না পড়লেও সেখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি, যানজটের প্রভাব থাকছে গোটা শহরেই। তার উপরে এক দিন রোদ উঠল, তো পরের দু’দিন হয়তো চলল বৃষ্টি। এর ফলেও অনেকে বাজারমুখো হচ্ছেন না।

Advertisement

হাতিবাগান চত্বরে শুক্রবার ক্রেতার অপেক্ষায় থাকা সুব্রত দত্ত বললেন, ‘‘করোনার দু’বছরে কোনওমতে সংসার টেনেছি। এ বার পুজোর ব্যবসা ভাল হবে ভেবে প্রচুর টাকা ঋণ নিয়ে জামা-কাপড় তুলেছি। কিন্তু কোনও দিন বৃষ্টি, কোনও দিন মিছিল-মিটিংয়ের জেরে ক্রেতারা আসছেন না।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাজনৈতিক নেতা-দাদারা সাধারণ মানুষের এই সমস্যা বুঝবেন কবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement