Trump Bitcoin Reserve

সোনা বিক্রি করে বিটকয়েন খরিদ! ‘ক্রিপ্টো’ ভান্ডার তৈরির পথে কৌশলী ট্রাম্প?

প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েই আমেরিকায় বিটকয়েনের ‘কৌশলগত ভান্ডার’ তৈরির নির্দেশ দিতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্রিপ্টোয় বদলানোর নেপথ্যে একাধিক যুক্তি রয়েছে তাঁর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৯
Share:
০১ ২০

এ বার সোনা বিক্রি করে বিটকয়েন কিনতে চলেছে আমেরিকা? যুক্তরাষ্ট্রের ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় মিলেছে সেই ইঙ্গিত। জনপ্রিয় এই ক্রিপ্টো মুদ্রার ‘কৌশলগত ভান্ডার’ (স্ট্র্যাটেজিক রিজার্ভ) গড়ে তুলতে চাইছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নিলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বড় বদল আসবে তা বলার আপেক্ষা রাখে না।

০২ ২০

ক্রিপ্টো মুদ্রার প্রবল সমর্থক ট্রাম্প তাঁর ভোট প্রচারেও বিটকয়েন রিজার্ভের কথা বলেছিলেন। নভেম্বরে দ্বিতীয় বারের জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিশেষ এই ডিজিটাল মুদ্রাটির দর হু হু করে বাড়তে থাকে। বড়দিনের মুখে ফের এক বার ‘কৌশলগত পুঁজি’ হিসাবে বিটকয়েনের কথা বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।

Advertisement
০৩ ২০

ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে বিটকয়েনের দর। গত ১৬ ডিসেম্বর এই ক্রিপ্টো মুদ্রার এক একটির দাম ছিল ১ লক্ষ ৭ হাজার ডলার। আগামী বছরের (পড়ুন ২০২৫) ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন ট্রাম্প। ফলে আপাতত বিটকয়েনের সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলেই মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

০৪ ২০

কিন্তু ইতিমধ্যেই বর্যীয়ান রিপাবলিকান নেতার সিদ্ধান্ত ঘিরে তাঁর নিজের দল এব‌ং দেশের মধ্যেই রয়েছে একাধিক প্রশ্ন। অনেকেই জানতে চাইছেন, ‘কৌশলগত পুঁজি’ বলতে ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন ট্রাম্প? কী ভাবেই বা বিটকয়েনে সেই ভান্ডার ভরিয়ে তুলবেন তিনি? এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ কোষাগার ভেঙে ‘হলুদ ধাতু’ বিক্রি করা কতটা যুক্তিযুক্ত?

০৫ ২০

খরা-বন্যা-ভূমিকম্প হোক বা অন্য কোনও সঙ্কট, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দেশকে রক্ষা করতে সরকারের কাছে থাকে বিশেষ একটি তহবিল। অর্থনীতির পরিভাষায় একেই বলে ‘কৌশলগত রিজার্ভ’। বিপদের সময়ে এই তহবিলের সঞ্চিত অর্থই রাষ্ট্রের একমাত্র আশা-ভরসা। আর তাই ‘কৌশলগত পুঁজি’ বৃদ্ধির দিকে নজর রাখে বিশ্বের প্রতিটি দেশ।

০৬ ২০

উদাহরণ হিসাবে আমেরিকার কৌশলগত পেট্রলিয়াম রিজ়ার্ভের কথা বলা যেতে পারে। ১৯৭৩-’৭৪ সালে পশ্চিম এশিয়ার আরব দেশগুলি ওয়াশিংটনকে অপরিশোধিত তেল বিক্রি বন্ধ করেছিল। ‘তরল সোনা’র অভাবে আমেরিকার অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। এর পরই ১৯৭৫ সালে কৌশলগত কাঁচা তেলের রিজার্ভ তৈরির জন্য বিশেষ আইন পাশ করে আমেরিকার পার্লামেন্ট।

০৭ ২০

বিগত কয়েক দশকে বহু বার তেলের দামের আঁচ লাগা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে ওই ‘কৌশলগত রিজার্ভ’-এর যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা। সাধারণত যুদ্ধ বা মেক্সিকো উপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘হ্যারিকেন’-এর দরুন বিশ্ব বাজারে কাঁচা তেলের দর হু হু করে বাড়তে থাকে। আর তখনই ঘরোয়া বাজারে পেট্রোপণ্যের দর কম রাখতে কৌশলগত রিজার্ভ ব্যবহার করে থাকে ওয়াশিংটন।

০৮ ২০

মেক্সিকো উপসাগর থেকে খনিজ তেল উত্তোলন করে যুক্তরাষ্ট্র। ঘূর্ণিঝড় ‘হ্যারিকেন’-এর দাপটে বেশ কয়েক বার ওয়াশিংটনের সেই পরিকাঠামো মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ঘরোয়া বাজারে ‘তরল সোনা’র দর বৃদ্ধি ছিল অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু ‘কৌশলগত রিজার্ভ’ থেকে পেট্রোপণ্য খোলা বাজারে নিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে আমেরিকা। এর জেরে মুদ্রাস্ফীতির হারকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’র দেশ।

০৯ ২০

‘কৌশলগত পুঁজি’ একমাত্র আমেরিকার রয়েছে, তা কিন্তু নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সামগ্রীর কৌশলগত রিজার্ভ জমা করে থাকে। যেমন দুনিয়ার একমাত্র ম্যাপেল সিরাপ ভান্ডার রয়েছে কানাডার হাতে। চিনের কৌশলগত রিজার্ভের আওতায় রয়েছে শস্য, দামি সংকর ধাতু এবং শুয়োরের মাংস।

১০ ২০

ট্রাম্প অবশ্য বিটকয়েনের ‘কৌশলগত রিজার্ভ’ কী ভাবে তৈরি করবেন, তা স্পষ্ট করেননি। এ ক্ষেত্রে আমেরিকার পার্লামেন্টে নতুন আইন পাশ করতে হতে পারে তাঁকে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দেশের আইনসভার অঙ্গ নন। ফলে এই বিল পাশ করতে হলে রিপাবলিকান দলের তরফে আনতে হবে বিল।

১১ ২০

আর এখানেই বাধার সম্মুখীন হতে পারেন ট্রাম্প। কারণ, তাঁর নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সমস্ত প্রার্থী যে বিটকয়েনের সমর্থক, এমনটা নয়। দ্বিতীয়ত, ক্রিপ্টো সমর্থকদের একাংশ আবার সোনা বিক্রি করে বিটকয়েন কেনার ঘোর বিরোধী।

১২ ২০

ফলে ক্রিপ্টো রিজার্ভ তৈরির জন্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয় রাস্তা ধরতে হতে পারে। দেশের ‘ট্রেজারির এক্সচেঞ্জ স্টেবিলাইজেশন তহবিল’-এর আধিকারিকদের বিটকয়েন কেনার নির্দেশ দিতে পারেন ট্রাম্প। বিদেশি মুদ্রা কেনা বা বিক্রি করার চূড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে এই তহবিলের হাতে।

১৩ ২০

বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘কৌশলগত সংরক্ষণ’ বাড়াতে বেআইনি লেনদেনে অভিযুক্তদের থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া বিটকয়েনও ওই তহবিলে যুক্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে ওয়াশিংটনের হাতে এই ধরনের প্রায় দু’লক্ষ ক্রিপ্টো মুদ্রা রয়েছে। এর আনুমানিক বাজারমূল্য ২,১০০ কোটি ডলার।

১৪ ২০

সূত্রের খবর, আগামী বছর জুলাই মাস থেকে বিটকয়েন জমানোর কাজ শুরু করবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন। এর জন্য খোলা বাজার থেকে ওই ক্রিপ্টো মুদ্রা কেনা হবে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। বিটকয়েনের বিপরীত ঋণ দেওয়ার নীতি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৫ ২০

ট্রাম্পের যুক্তি, ‘‘চিনের সঙ্গে ক্রমশ কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের। আর তাই বিটকয়েনের রিজ়ার্ভ তৈরি করা খুবই জরুরি। এতে আগামী দিনে ক্রিপ্টো বাজারে একাধিপত্য তৈরি করতে সক্ষম হবে আমেরিকা।’’

১৬ ২০

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে একরকম ‘গেম চেঞ্জার’ বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এর ফলে বিশ্ব বাজারে আরও শক্তিশালী হবে ডলার। ফলে কোনও রকমের কর বৃদ্ধি না করেই দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সুযোগ পাবেন ট্রাম্প।

১৭ ২০

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, ডলার শক্তিশালী হলে চিন এবং রাশিয়ার মতো শত্রু দেশকে মোকাবিলা করা ওয়াশিংটনের পক্ষে অনেকটা সহজ হবে। দেশের আর্থিক ঘাটতি মেটানোও ট্রাম্পের পক্ষে খুব কঠিন হবে না।

১৮ ২০

কিন্তু, এর উল্টো যুক্তিও রয়েছে। বেশির ভাগ পণ্যের ক্ষেত্রেই বিটকয়েনের কোনও অন্তর্নিহিত ব্যবহার নেই। ফলে আমেরিকার অর্থনীতিতে এটি যে দারুণ ভাবে প্রভাব ফেলতে পারবে, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই।

১৯ ২০

২০০৮ সালে বাজারে আসে বিটকয়েন। প্রথম দিন থেকেই দামের নিরিখে অস্থিরতায় ভুগেছে জনপ্রিয় এই ক্রিপ্টোকারেন্সি। সোনার মতো উত্তরোত্তর এর দর বৃদ্ধির প্রবণতা নেই। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এটি আদৌ কতটা কাজে লাগবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

২০ ২০

সবশেষে অবশ্যই থাকছে হ্যাকারদের ভয়। সাইবার আক্রমণে বহু বার বিটকয়েনের দরে ধস নামতে দেখা গিয়েছে। রুশ গুপ্তচর সংস্থার হ্যাকার বাহিনী খুবই শক্তিশালী। আর তাই এই ক্রিপ্টো মুদ্রার ‘কৌশলগত রিজার্ভ’ তৈরিতে নিরাপত্তার দিকটি অন্তত ১০ বার খতিয়ে দেখতে হবে ট্রাম্পকে। তবে আমেরিকা বিটকয়েনের ‘কৌশলগত সংরক্ষণ’ শুরু করলে অন্যান্য দেশের সেই রাস্তায় হাঁটার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement