প্রতীকী ছবি।
নির্মীয়মাণ একটি বহুতলের নীচে, খোলা রাস্তায় মিলল বছর পঁচিশ-ছাব্বিশের এক তরুণীর দেহ। দেহের কোথাও আপাত ভাবে আঘাতের তেমন কোনও চিহ্ন না মিললেও তাঁর মাথার পিছনে একটি ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। মৃতার পরনে ছিল শর্টস এবং টি-শার্ট। পুলিশ দেহটি তুলতেই দেখা যায়, সেখানে রক্তের দাগ। বুধবার সকালে দক্ষিণ দমদমের পি কে গুহ রোডের এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়।
বেলা পর্যন্ত মৃতার পরিচয় জানা না গেলেও দুপুরের দিকে এক তরুণী দমদম থানায় হাজির হয়ে নিজেকে ওই তরুণীর বন্ধু বলে পরিচয় দেন। দিয়া নামের সেই তরুণীর কথায় রহস্য আরও বেড়েছে। তিনি দাবি করেছেন, মৃতার নাম সঙ্গীতা। তাঁরা দু’জন একসঙ্গে থাকতেন। বিভিন্ন নির্মীয়মাণ আবাসনই ছিল তাঁদের ঠিকানা। মঙ্গলবার রাতে পি কে গুহ রোডের ওই নির্মীয়মাণ বহুতলেও তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন। কিন্তু সঙ্গীতার মৃত্যু কী ভাবে হল, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন দিয়া। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে নির্মীয়মাণ ওই বহুতলের ঠিক বাইরে পাঁচিলের ধারে পড়ে ছিল সঙ্গীতার দেহ। উল্টো দিকের বহুতলের বাসিন্দা সঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখি, পাঁচিলের ধার ঘেঁষে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে ওই তরুণীর দেহ। কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। পোশাকেও কোনও দাগ ছিল না। মেয়েটি আমাদের পাড়ার নয়। আগে কখনও দেখিনি।”
দমদম থানার পুলিশ জানিয়েছে, সুরতহাল করার সময়ে সঙ্গীতার মাথার পিছনে একটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ময়না-তদন্ত করার সময়েও চিকিৎসকের নজরে এসেছে তা। ভারী এবং ভোঁতা কিছু দিয়ে আঘাত করলে ওই রকম ক্ষত হতে পারে। পুলিশ অবশ্য বলছে, উপর থেকে পড়লেও তেমন আঘাত লাগতে পারে। তবে উপর থেকে পড়ে থাকলে শরীরের আর কোথাও আঘাত না লাগাটা বিস্ময়ের। সঙ্গীতার শরীরের কোনও হাড়ও ভাঙেনি বলেই পুলিশ জেনেছে।
পুলিশের দাবি, দিয়াকে জেরা করে জানা গিয়েছে, তাঁরা বিভিন্ন নির্মীয়মাণ বাড়িতে থাকতেন। দোকানে দোকানে কাজ করে নিজেদের খরচ চালাতেন। সঙ্গীতার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের কারও সঙ্গেই সঙ্গীতা যাননি, না কি তাঁরা কেউ সঙ্গীতাকে নিতে চাননি, তা জানা যায়নি। তাঁর বাবা-মা সম্ভবত ওড়িশায় থাকেন। কিন্তু দিয়ার কথার সত্যতা নিয়ে ঘোরতর সন্দিগ্ধ পুলিশ। নিজের পরিবার সম্পর্কেও বিশেষ তথ্য দেননি তিনি।
দিয়া পুলিশকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল সঙ্গীতার। সেই কারণেই অশান্তিতে ছিলেন তিনি। মানসিক অস্থিরতাও ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সব ধরনের নেশাই করতেন সঙ্গীতা। দিয়াও মঙ্গলবার রাতে নেশা করেছিলেন। ফলে সঙ্গীতা তাঁর সঙ্গে থাকলেও পরে কী ঘটেছে, তা তিনি জানেন না।
এ দিন বেলার দিকে ঘুম ভাঙার পরে সঙ্গীতার বিষয়ে জানতে পারেন দিয়া। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বহুতল থেকে সঙ্গীতার কিছু পোশাক পাওয়া গিয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। আপাতত সঙ্গীতার বাড়ির লোকেদের খোঁজে রয়েছেন তাঁরা।