সোমবারের কর্মসূচি সফল করতে বিজেপি-র ভরসা যুব ও মহিলা শাখা। ফাইল চিত্র
লকডাউন পরিস্থিতি উপেক্ষা করে সোমবার কলকাতা পুরসভা ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা করেছে রাজ্য বিজেপি। জাল ভ্যাকসিন-কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে শহরের বাইরে থেকে কর্মী, সমর্থক না এনে বিজেপি চায় দলের উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা জেলা সংগঠনের উপরে নির্ভর করেই হবে এই কর্মসূচি। তবে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে দলের যুব ও মহিলা শাখার কর্মীদের আনার বিষয়ে। বিজেপি সূত্রে খবর, গত বুধবারই দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু কলকাতার যুব মোর্চা ও মহিলা মোর্চার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই পুরসভা ঘেরাও কর্মসূচিকে কী ভাবে বড় আকার দেওয়া যায়, তার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রাজ্যে ঘোষিত লকডাউন না হলেও কড়া বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। চালু হয়নি লোকাল ট্রেন, মেট্রো রেল। দোকান, বাজার থেকে বিভিন্ন গণপরিবহণ পরিষেবা নিয়ন্ত্রিত। ৫০ জনের বেশি জমায়েতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিক্ষোভ দেখালে পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হবে জেনেই গেরুয়া শিবির কর্মসূচি সাজাচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘পুলিশকে জানালেও অনুমতি মিলবে না। বড় জমায়েত হওয়ায় পুলিশ বাধাও দেবে। তাই প্রশাসনকে না জানিয়েই হবে পুরসভা ঘেরাও।’’
ভোটের ফল ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্যে লকডাউন পরিস্থিতি জারি হয়ে যায়। এর ফলে কলকাতায় তো বটেই, রাজ্যের অন্যত্রও সে ভাবে আন্দোলনে নামতে পারেনি বিজেপি। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করলেও বাংলায় আন্দোলন জমাতে পারেনি বিজেপি। জাল ভ্যাকসিন-কাণ্ড নিয়েও সরব দলের নেতারা। কিন্তু বিক্ষোভ দেখানোর সুযোগ নেই। কলকাতার এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘শহরে জমায়েতের অনুমতি কবে মিলবে, তার অপেক্ষায় না থেকে এখনই পুরসভা ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের যা মনোভাব তাতে লোকাল ট্রেন চালু করলেও জমায়েতের অনুমতি দেবে না। কারণ, সরকার চায় না বিজেপি আন্দোলনে নামুক।’’
প্রসঙ্গত, জাল ভ্যাকসিন-কাণ্ড সামনে আসতেই রাজ্য বিজেপি-র পক্ষে বলা হয়েছিল জুলাই মাসের শুরুতেই লালবাজার ঘেরাও হবে। তখনও পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বের আশা ছিল, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে লোকাল ট্রেন চালু হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা করতে না পারাতেই এখন পুরসভা ঘেরাওয়ের এই পরিকল্পনা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে পুরসভার দিকে আসার চেষ্টা করা হবে। পুলিশ যেখানে বাধা দেবে সেখানে বসে চলবে বিক্ষোভ।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে গত অক্টোবরে বিজেপি-র নবান্ন অভিযান ঘিরে কলকাতা ও হাওড়ায় ধুন্ধুমার কাণ্ড হয়েছিল। সে বার শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে নবান্নে যাওয়া হবে এবং পুলিশ কোথাও আটকালে সেখানেই কর্মী, সমর্থকরা দাঁড়িয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করেছিল বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুব মোর্চার মিছিল ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি এবং বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। একটি পিস্তলও উদ্ধার হয়। পুলিশ পাল্টা জলকামান ও লাঠি চালায়। পুলিশ জলকামানে রঙিন রাসায়নিক জল ব্যবহার করে বলেও অভিযোগ তুলে বিজেপি দাবি করেছিল তাদের অনেক কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবারের পরিস্থিতি যাতে তেমন কিছুতে না পরিণত হয়, তা নিয়ে কলকাতার যুব ও মহিলা মোর্চার কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে বলেও বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে লকডাউন পরিস্থিতিতে সোমবারে কর্মসূচি কতটা সফল করা যাবে তা নিয়ে চিন্তাতেও রয়েছে বিজেপি।