ফাইল চিত্র।
শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ‘প্রভারী’র দায়িত্ব দিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে আবার বার্তা দিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গে তাঁর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল অমিত শাহের ‘ঘনিষ্ঠ’ অমিত মালব্যকে। যদিও কৈলাসের শিবির তা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, মহা গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের আগে কৈলাসের উপর যে তাঁদের আস্থা আছে, একমাত্র বঙ্গের দায়িত্ব অর্পণ করে দলীয় নেতৃত্ব সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন। বস্তুত, ছ’জন সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একমাত্র কৈলাস ছাড়া বাকি পাঁচজনকেই একাধিক রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি সূত্রের খবর, কৈলাসের উপদলীয় কার্যকলাপে বিরক্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি যখন নীলবাড়ি দখলের স্বপ্ন দেখছে, তখন রাজ্যে গোষ্ঠীলড়াইয়ের ঘটনা মুহূর্মূহু প্রকাশ্যে আসছিল। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং একদা তৃণমূলের দু’নম্বর মুকুল রায়ের মতানৈক্য তুঙ্গে উঠেছিল। সেই সমীকরণে কৈলাস যে মুকুলের পক্ষে ছিলেন, সেটা দলের অন্দরে সকলেই জানতেন। দু’পক্ষের ক্রমাগত আকচাআকচিতে বিরক্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উভয় তরফকেই দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে সতর্ক করেন। তার আগে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার পরেও সংযমী না-হওয়ায় তাঁকে পদ থেকে সরাসরি সরিয়ে দেওয়া হয়। রাহুলের উদাহরণ সামনে রেখে কৈলাসকেও বার্তা দেওয়া হয়েছিল বলে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সূত্রের খবর। যেমন বার্তা দেওয়া হয়েছিল এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এক রাজ্যসভা সাংসদকেও। তাঁদের দু’জনকেই বলা হয়েছিল, তাঁদের মতো মানুষের উপদলীয় কোন্দল এবং রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। তাতে দলের ভিতরে-বাইরে ভুল বার্তা যাচ্ছে। ওই দু’জনই সেই বার্তা বুঝে নিজেদের সংযত করেছিলেন। রাহুল করেননি। ফলে তাঁকে ‘সবক’ শেখানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: নীলবাড়ি দখলের যুদ্ধে ‘অমিত-শস্ত্র’ প্রয়োগ করলেন শাহ অমিত
বার্তা দেওয়া হয়েছিল দিলীপকেও। তাঁকে বলা হয়েছিল, রাজ্য সভাপতি হিসেবে যেন তিনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলেন। সেটাই তাঁর কাজ। বিশেষত, এই গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোটের আগে। একই সঙ্কেত গিয়েছিল অধুনা অপসারিত এবং দিলীপ-ঘনিষ্ঠ সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। সূত্রের খবর, দিলীপ সেই নির্দেশ মেনে নিলেও সুব্রত জোরাল ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছিলেন। তাই তাঁকে পত্রপাঠ সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:১৯-এ মেগা শো ঘোষণা শুভেন্দুর, ‘চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি’ শোনালেন অখিল
একই ভাবে কৈলাসকেও বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল, মধ্যপ্রদেশের উপনির্বাচন পর্যন্ত তিনি যেন সেখানেই বেশি মনোনিবেশ করেন। পক্ষান্তরে, যাতে বাংলার বিষয়ে বেশি মাথা না ঘামান। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-র ফলাফলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সন্তুষ্ট। কৈলাসও নিজেকে সংযত করেছেন বলেই খবর। তাই তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের প্রভারীর (পর্যবেক্ষক) পদে রেখে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, তিনি আগেও ওই পদেই ছিলেন। তবে একইসঙ্গে দলের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কৈলাসকে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেরই পর্যবেক্ষক রাখা হয়েছে। যেখানে অন্যান্যদের একাধিক রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশিই, তাঁর সঙ্গে সহ-প্রভারী (সহ-পর্যবেক্ষক) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিতের নাম। যিনি আদতে অমিত শাহের ‘ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন’। দলের একাংশের ব্যাখ্যা, এর মারফত কৈলাসকে আরও একবার সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হল। আবার দলের অন্দরে কৈলাসের হিতৈষীরা দাবি করছেন, পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। সেই রাজ্যের দায়িত্ব কৈলাসের একার হাতে রাখার অর্থ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে যে তাঁর উপর আস্থা অটুট, তা বোঝানো। কৈলাসপন্থী এক নেতার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে কৈলাস’জিই পশ্চিমবঙ্গে দল পরিচালনা করবেন। এই বার্তাই তো আসল। এবং সেটাই কি তাঁর গুরুত্ব বোঝানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়? যাঁরা বলছেন, কৈলাস’জিকে একমাত্র বাংলার প্রভারী রেখে দিয়ে আবার বার্তা দেওয়া হল, তাঁরা বুঝতে পারছেন না, অদূর ভবিষ্যতে বাংলার রাজনীতিতে দলের রাশ একমাত্র তাঁর হাতে দিয়েই নিশ্চিন্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’’