—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
শরীরের ঊর্ধ্বাংশে আগুন জ্বলছে। সেই অবস্থায় তরুণী দাবি করেছিলেন, তাঁর স্বামী ও আরও এক জন সেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। বেলঘরিয়ার এই ঘটনার তদন্তে পুলিশের হাতে উঠে এসেছে অন্য তথ্য। জানা গিয়েছে, তরুণী নিজেই রাস্তায় হাঁটার সময়ে গায়ে আগুন দেন!
কিন্তু কেন তিনি বার বার স্বামীর নামে অভিযোগ করেছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। খড়দহের বাসিন্দা রিনা ওরফে সঙ্গীতা সরকার এখনও কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও সঙ্কট কাটেনি। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের উপ-নগরপাল (দক্ষিণ) অনুপম সিংহ বলেন, ‘‘প্রথমে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও, পরে জানা গিয়েছে, তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
তদন্তকারীরা জেনেছেন, স্বামী নিলয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয় রিনার। এর আগেও কখনও গলায় ফাঁস দিয়ে, কখনও গায়ে অ্যাসিড ঢেলে, কখনও আবার খড়দহ স্টেশনে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ওই তরুণী।
শুক্রবার বিকেলে বেলঘরিয়ায় বান্ধবীর বাড়ি থেকে ফিরছিলেন রিনা। সেই সময়ে আর্যনগর অনুপমা রোডে ফাঁকা রাস্তায় তাঁর আর্তনাদ শুনে স্থানীয়েরা বেরিয়ে দেখেন, তরুণীর গায়ে আগুন জ্বলছে। চিৎকার করে তিনি নিলয়ের শাস্তি দাবি করছিলেন। স্থানীয়েরা বস্তা চাপা দিয়ে আগুন নেভান।
বেলঘরিয়া থানার পুলিশ এসে রিনাকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। রিনা পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, নিলয় ও তাঁর এক বন্ধু মোটরবাইকে চেপে এসেছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা রিনার গায়ে কেরোসিনে ভেজানো কাপড় ছুড়ে দেন। তার পরে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি ছুড়ে দিয়ে বাইক নিয়ে চম্পট দেন।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই নিলয়কে আটক করে পুলিশ। সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদে নিলয় দাবি করেন, ঘটনার সময়ে তিনি কলকাতায় নিজের কর্মস্থলে ছিলেন। সেই মতো তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এবং মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন, ওই যুবক সত্যি বলছেন। এমনকি, আর্যনগরের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও নিলয়কে দেখতে পায়নি পুলিশ। পাশাপাশি, নিলয়ের পরিবার ও তাঁর শ্বশুরবাড়িতে কথা বলেও তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, রিনা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশকে নিলয়ের পরিজনেরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে চিপস কিনতে যাওয়ার নাম করে খড়দহের বিবেকনগরের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন রিনা।
বান্ধবীর বাড়িতে এলেও রিনা কেরোসিন কী ভাবে নিয়ে এলেন এবং রাস্তায় হাঁটার সময়ে কী ভাবে ওই কাণ্ড ঘটালেন, তা-ও জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। তবে, রিনা কিছুটা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও মোটামুটি ভাবে তদন্তকারীদের কাছে স্পষ্ট যে, দাম্পত্য কলহের জেরেই আত্মহত্যা করে স্বামীকে তাতে জড়াতে চেয়েছিলেন ওই তরুণী।