Bangladesh

চেন্নাইয়ে ‘জীবনযুদ্ধ’ শেষে শহরে ফিরে তৃপ্ত বাংলাদেশি

বৃহস্পতিবার রাতে চেন্নাই থেকে উড়ানে শহরে নেমে আটকে পড়েছেন লকডাউনে।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৪৩
Share:

বিমানবন্দরে মহম্মদ সবুজ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

টার্মিনালের বাইরে মেঝেতে চাদর পেতে রাতে শুয়েছিলেন। ব্যাগ ছিল মাথার নীচে। পাশে রাখা ছিল জুতো। সকালে ঘুম ভেঙে দেখেন, ব্যাগ থাকলেও জুতো উধাও। অগত্যা খালি পায়েই বাংলাদেশের বাড়িতে ফিরবেন মহম্মদ সবুজ।

Advertisement

তবে গত ছ’মাসে সবুজের জীবনে যে ঝড় বয়ে গিয়েছে, তার তুলনায় জুতো চুরির ঘটনাটি কিছুই নয়। শুক্রবার কলকাতা বিমানবন্দরের বাইরে বসে ওই যুবক বললেন,‘‘কলকাতায় এসে কী যে শান্তি পেয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না। আমার দেশ তো সামনেই। খালি পায়েই না হয় ফিরব।’’

ফিরে যেতে পারতেন শুক্রবারেই। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে চেন্নাই থেকে উড়ানে শহরে নেমে আটকে পড়েছেন লকডাউনে। সবুজ জানালেন, আজ শনিবার সকালে বেনাপোলের বাস ধরবেন। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জোয়ালগঞ্জে তাঁর স্ত্রী অপেক্ষা করছেন।

Advertisement

এক সময়ে কয়েক বছর ওমানে হোটেল-বয়ের কাজ করেছিলেন সবুজ। কিছু টাকা জমিয়ে দেশে ফিরে বছরখানেক আগে বিয়ে করেন। হঠাৎই শখ চাপে ভারত ঘোরার। বাংলাদেশ থেকে চেন্নাইয়ে আসা গ্রামেরই এক জনের কাছে শুনেছিলেন, চেন্নাই নাকি মনোরম শহর। সেই মতো মার্চে লকডাউন শুরুর ঠিক আগে সঞ্চিত কিছু টাকা আর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ৩২ বছরের যুবকটি। ঠিক করেছিলেন, কলকাতা ঘুরে চেন্নাই গিয়ে কয়েক দিন কাটিয়ে আবার ফিরতি পথে কলকাতায় কিছু দিন থেকে দেশে ফিরবেন। ভারতে ঘোরার জন্য এক বছরের ভিসাও করিয়ে নেন।

সেই মতো ট্রেনে করে বেনাপোল, সেখান থেকে বাসে কলকাতায় এসে এক রাত ধর্মতলার হোটেলে কাটিয়ে হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে পৌঁছে যান চেন্নাই। কিন্তু সেখানে দিন কয়েক থাকার পরেই শুরু হয়ে যায় লকডাউন। কলকাতায় ফিরতে চেয়েও পারেননি সবুজ। জমানো টাকাও ফুরিয়ে আসায় হোটেল ছেড়ে এক তামিল ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন। সবুজের কথায়, ‘‘ওই দিনগুলিতে প্রায় ভিক্ষা করে পেট চালাতে হয়েছে।’’

কিছু দিন পরে সেই ভাড়াও যখন দেওয়ার অবস্থা ছিল না, তখন ওই ব্যক্তির ফলের দোকানে কাজ শুরু করেন সবুজ। মাল তোলা-নামানোর কাজ। দোকান পরিষ্কারের কাজ। মালিক যত টাকা দিতেন, কিছুটা খাওয়ার জন্য খরচ করে বাকিটা জমাতে শুরু করেন সবুজ। ট্রেন চালু হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু যখন বুঝতে পারেন এখনই সেই সম্ভাবনা নেই, তখন চেন্নাই-কলকাতা উড়ানের টিকিট কাটেন। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতায় নেমে জানতে পারেন লকডাউন। তখন ঠিক করেন, আজ শনিবার ফিরবেন বাংলাদেশে।

শুক্রবার লকডাউনের দিন কলকাতা বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গিয়েছে বেশ কয়েক জন পরিযায়ী শ্রমিককে। অধিকাংশই বৃহস্পতিবার রাতে শহরে এসে আটকে পড়েছেন। যেমন, রামপুরহাটের শান্তি বিবি মুম্বইয়ে পরিচারিকার কাজ করেন। স্বামীও সেখানে রাজমিস্ত্রি। তিন ছেলেমেয়ে থাকেন রামপুরহাটে। শান্তিদেবীর কথায়, ‘‘শুক্রবার লকডাউনের কথা শুনে এজেন্টকে টিকিট বাতিল করতে বলেছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় এজেন্ট জানান, উড়ান চলবে। তড়িঘড়ি রামপুরহাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিন বার বাস পাল্টে রাত একটায় বিমানবন্দরে পৌঁছেছি।’’

ওই মহিলা ভেবেছিলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিমানবন্দরে কাটিয়ে শনিবার সকালের উড়ানে মুম্বই যাবেন। কিন্তু, এমনি ক্ষেত্রে শনিবার মুম্বইয়ের সরাসরি উড়ান থাকলেও শেষ মুহূর্তে লকডাউন উঠে যাওয়ায় আজ কলকাতা থেকে যাবতীয় উড়ান বাতিল। ফলে, দু’দিন হাপিত্যেশ করে রবিবারের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই শান্তিদেবীর সামনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement