সাহায্য: বাপ্পা নাগের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে এক দিনের উপার্জনের টাকা। নিজস্ব চিত্র
সহকর্মীর মৃত্যুতে সারাদিন অটো চালানো বন্ধ রেখে শোক পালন আর নয়। বরং দিনভর অটো চালিয়ে উপার্জনের টাকা তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল অটো ইউনিয়ন। কর্মসংস্কৃতির এই পরিবর্তনের কারণে যাত্রী হয়রানির ছবিও বদলাবে বলে আশ্বাস ইউনিয়নের।
সম্প্রতি গড়িয়া-গঙ্গাজোয়ার অটো ইউনিয়নের সদস্য বাপ্পা নাগ (৪৯) নামে এক চালক হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্ত্রী এবং এক মেয়ে নিয়ে তিন জনের পরিবারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন বাপ্পা। কলেজ পড়ুয়া মেয়ের পড়াশোনার খরচ টানতে এমনিতেই আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছিল পরিবারটি। তার মধ্যে এই বিপর্যয়। আয়ের অন্য কোনও ব্যবস্থাও নেই তাদের। এ সব দিক বিবেচনা করে সহকর্মীর পরিবারের পাশে অন্য ভাবে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন সদস্যেরা।
ঘটনার দিন শোক পালন করতে অটো বন্ধ না রেখে ইউনিয়নের প্রত্যেকে দিনের রোজগার বাপ্পার পরিবারর হাতে তুলে দেয়। দিন কয়েক আগে বাপ্পার স্ত্রী পিঙ্কি নাগের হাতে ৪৭ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন তাঁরা। রুটের অটো সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ আইচ বলেন, ‘‘এত দিন কোনও চালক বা মালিক মারা গেলে তাঁর সম্মানে আমরা এক দিন অটো বন্ধ রাখতাম। নিজেদের মধ্যে থেকে চাঁদা তুলে সহকর্মীর শেষকৃত্যে পরিবারকে সাহায্য করতাম। কিন্তু অটো বন্ধ রাখায় দেখা গিয়েছে, নিত্য যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।’’
আরও পড়ুন: পোষ্য নিয়ে প্রবেশের দাবি ইকো পার্কে
বৈঠকে স্থির হয়েছিল, এত দিন শোক পালনে অটো বন্ধ রেখে যে ভাবে সহকর্মীর পরিবারের পাশে তাঁরা দাঁড়িয়েছেন, সে ভাবে আর নয়। বরং এক দিনের রুটের রোজগার তাঁরা তুলে দেবেন বিপর্যস্ত পরিবারকে। কারণ, অধিকাংশ অটোচালকই আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল নন। তাঁদের কোনও প্রভিডেন্ট ফান্ডও নেই বলে জানাচ্ছেন চালকেরা। ফলে কারও মৃত্যু হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গোটা সংসার ভেসে যায়। অন্য দিকে, অটো চললে যাত্রীরাও দুর্ভোগের শিকার হবেন না।
আরও পড়ুন: ভাসমান বাজারে কংক্রিটের স্ল্যাবের উপরে থাকবে নৌকা
ইউনিয়ন সূত্রের খবর, রুটটিতে মোট ১৪০টি অটো রয়েছে। একাধিক অটোমালিক নিজেরাই অটো চালান। বাকি মালিকেরা চালক রেখেছেন। সেই চালকেরা অটোমালিকদের দৈনিক ৪০০ টাকা করে দেন। গ্যাস ভরতে খরচ হয় প্রায় দেড়শো টাকা। বাকি আয় চালকের নিজস্ব। এক চালকের কথায়, ‘‘মালিক ও গ্যাসের খরচ মিটিয়ে হাতে ২০০-২৫০ টাকা থাকে।’’ সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মালিক এবং চালকদের প্রত্যেককে এক দিনে দুশো টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। তবে ভাড়ায় যাঁরা অটো চালান, তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় আছে।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে কয়েক কিস্তিতে ২০০ টাকা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাঁদের। সেই মতো হিসেব কষে মালিকদের থেকে এককালীন টাকা নিয়ে মৃতের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ ওই ইউনিয়নের আরও এক চালক আনোয়ার নস্করের পরিবারকেও একই ভাবে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই ইউনিয়ন।
বাপ্পার স্ত্রী পিঙ্কি নাগ বলেন, ‘‘আমার স্বামী অটো চালিয়ে দৈনিক দুশো টাকা আয় করতেন। তার প্রায় সবটাই সংসারে খরচ হয়ে যেত। জমানো কিছুই নেই। ওঁর সহকর্মীদের থেকে ৪৭ হাজার টাকা পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে। ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা।’’