প্রতীকা রাওয়াল। ছবি: বিসিসিআই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতীকা রাওয়ালের অভিষেক গত ২২ ডিসেম্বর। প্রথম ম্যাচ থেকেই ধারাবাহিক ভাবে রান করছেন ২৪ বছরের ওপেনিং ব্যাটার। বুধবারের আগে পাঁচটি ম্যাচের তিনটি অর্ধশতরান করেছিলেন। এ দিন আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহিলাদের এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শতরান করলেন। স্মৃতি মন্ধানার ৮০ রানে ১৩৫ রানের ইনিংসের পাশে উজ্জ্বল প্রতীকার ১২৯ বলে ১৫৪ রানের ইনিংস। প্রথম উইকেটের জুটিতে তাঁরা ২৬.৪ ওভারে তুললেন ২৩৩ রান।
ছ’টি এক দিনের ম্যাচ খেলার পর প্রতীকার রান ৪৪৪। এক বারও অপরাজিত না থেকেও গড় ৭৪। স্ট্রাইক রেট ৯৫.৬৮। প্রতীকার এই সাফল্যে তৈরি হয়েছে নতুন বিশ্বরেকর্ডও। তিনিই বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার, যিনি প্রথম ছ’টি এক দিনের ম্যাচ খেলে ৪০০ বা তার বেশি রান করেছেন। এই বিশ্বরেকর্ড শুধু মহিলাদের ক্রিকেটে নয়। পুরুষদের ক্রিকেটেও এমন কৃতিত্ব নেই কারও। ভেঙে দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের টম কুপারের বিশ্বরেকর্ড। তিনি প্রথম ছ’টি এক দিনের ম্যাচ খেলে করেছিলেন ৩৯২ রান। এক দিনের ক্রিকেটে ভারতের মহিলা ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রতীকার ১৫৪ রানের ইনিংস তৃতীয় সর্বোচ্চ। তাঁর আগে রয়েছে দীপ্তি শর্মার ১৮৮ এবং হরমনপ্রীত কৌরের ১৭১ রানের অপরাজিত ইনিংস।
আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে রাজকোটের ২২ গজে প্রতীকা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যারও বোধ হয় সমাধান করে ফেললেন। মহিলাদের সাদা বলের ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে মন্ধানার যোগ্য সঙ্গীর খোঁজ চলছিল দীর্ঘ দিন ধরে। অনেককে চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ কেউ বিক্ষিপ্ত ভাবে সাফল্য পেলেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি। এক মাসও হয়নি মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন। মাত্র ছ’টি ম্যাচ খেললেও সাফল্য এবং ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এগোচ্ছেন।
আইরিশদের বিরুদ্ধে তৃতীয় ম্যাচে ৫২ বলে অর্থশতরান পূর্ণ করার পর দলের ইনিংস গড়ার দিকে মন দিয়েছেন প্রতীকা। দলের স্বার্থে খেলেছেন। আগ্রাসী মেজাজে থাকা মন্ধানাকে যতটা সম্ভব বেশি বল খেলার সুযোগ দিয়েছেন। দলের রান তোলার গতি কমে যেতে দেননি। ২২ গজের এক দিক আগলে রেখে পরিণতিবোধের পরিচয় দিয়েছেন। শতরান পূর্ণ করেছেন ১০০তম বলে। তার পর কিছুটা আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে পারা প্রতীকার অন্যতম বড় গুণ।
হরিয়ানার প্রেম নগরের বাসিন্দা প্রতীকা গত বছর পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন দিল্লির হয়ে। এখন তিনি রেলের ক্রিকেটার। ১০ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু বাবা প্রদীপ রাওয়ালের হাত ধরে। তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) নথিভুক্ত আম্পায়ার। পরে শ্রবণ কুমারের কাছে প্রথাগত ভাবে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ক্রিকেট ছাড়া বাস্কেটবলেও দক্ষ প্রতীকা। ২০১৯ সালে জাতীয় স্কুল গেমসে বাল ভারতী স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্কুলের হয়ে জেতেন সোনার পদক। ছোট থেকে খেলা পাগল হলেও পড়াশোনাকে কখনও অবহেলা করেননি। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পেয়েছিলেন ৯২.৫ শতাংশ নম্বর। দিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজে থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক প্রতীকার লক্ষ্য এখন ভারতীয় দলে জায়গা পাকা করা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় এবং আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়ে দলকে ভরসা দেওয়া প্রতীকা কি পারবেন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের প্রতীক হয়ে উঠতে?
ভবিষ্যৎ উত্তর দেবে ক্রিকেটার প্রতীকা কতটা এগোতে পারবেন। তবে বুধবার তাঁর এবং মন্ধানার দাপটে আইরিশেরা তৃতীয় ম্যাচে হারল ৩০৪ রানে। প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ৪৩৫ রান করে ভারত। রিচা ঘোষ করেন ৪২ বলে ৫৯। জবাবে ৩১.৪ ওভারে ১৩১ রানে শেষ হয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। সরা ফোর্বস (৪১) এবং ওরলা প্রেনডারগাস্ট (৩৬) ছাড়া কেউই বলার মতো রান করতে পারেননি। ভারতের সফলতম বোলার দীপ্তি শর্মা ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। ৩১ রানে ২ উইকেট তনুজা কানওয়ারের।