মুকুন্দপুরে সোনার দোকানে ডাকাতির চেষ্টার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত।
খাস কলকাতায় সোনার দোকানে লুটের চেষ্টা। বাধা পেয়ে কোপানো হল দোকানের মালিককে। দুষ্কৃতীকে স্থানীয় বাসিন্দারাই ধরে ফেলেন। তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দোকানের মালিক।
মুকুন্দপুরের গীতাঞ্জলি জুয়েলার্স নামের স্থানীয় সোনার দোকানে রবিবার সকালে ডাকাতির চেষ্টা হয়। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ভরা বাজার এলাকায় ওই দোকান। অন্যান্য দিনের মতো রবিবারও সকাল থেকে দোকানে বসেছিলেন সঞ্জয় কুমার সরকার। বছর ৪৩-এর ওই যুবক দোকানের মালিক। আচমকা তাঁর চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এলাকার বাসিন্দারা। দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় আর্তনাদ করছেন সঞ্জয়। তাঁরা অভিযুক্তকে ধরে ফেলেন।
এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ। তারা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। স্থানীয়দের হাত থেকে অভিযুক্তকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সঞ্জয়ের গলায় সোনার চেন ছিল। অভিযুক্ত ঢুকে প্রথমে সেই হার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। বাধা দিতে গেলে সঞ্জয়ের গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ মারা হয়। তাঁর চিৎকার শুনে বাকিরা ছুটে আসেন। একাধিক বার তাঁর গলায় কোপ মারা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম দীপঙ্কর পাল। তিনি একটি হাসপাতালের নার্সিং কর্মী হিসাবে কর্মরত। বাজারে তাঁর ঋণের বোঝা বেড়ে গিয়েছিল। শেয়ার বাজারেও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। তাই টাকা জোগাড়ের উদ্দেশ্যে সোনার দোকানে ডাকাতির চেষ্টা করেছিলেন তিনি। সব্জি কাটার ছুরি দিয়েই আক্রমণ করেছিলেন দোকানের মালিককে।
প্রাথমিক ভাবে এক জন অভিযুক্তের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তবে এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার সাহায্য নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, তিন দিন আগে এলাকায় ‘রেকি’ করতে এসেছিলেন অভিযুক্ত। সে দিন তিনি দু’টি সোনার চেন দেখে গিয়েছিলেন। ১২ গ্রাম এবং তিন গ্রামের ওই দুই চেনের বাজারমূল্য ছিল ১.৪ লক্ষ টাকা। রবিবার দোকানে ক্রেতা সেজে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত। সেখানে গিয়ে প্রথমে ওই দু’টি চেন দেখতে চান তিনি। তার পর আক্রমণ করেন।
স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, এলাকা শান্তিপূর্ণ। এই ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি। তবে অনেকেই আতঙ্কে ভুগছেন। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা বসে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম সোনার দোকানের দিক থেকে চেঁচামেচি হচ্ছে। ওখানে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। আমরা সবাই মিলে ধরে ফেলেছি।’’ এক মহিলার কথায়, ‘’২০ বছর ধরে এই এলাকায় আছি, এমন ঘটনার কথা কখনও শুনিনি। সঞ্জয়দার চিৎকার শুনে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। দেখলাম ওঁর গলা থেকে রক্ত পড়ছে। ওঁর পোশাক দিয়েই রক্ত চেপে ধরে হাসপাতালে পাঠালাম। এক জনকে এলাকার মানুষই ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।’’
দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতা পুলিশের ডিসি (পূর্ব ডিভিশন)। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সোনার দোকান এবং আশপাশের এলাকা খতিয়ে দেখেন।