প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ ছিল, হোটেল বা ঘেরা জায়গায় যে কোনও অনুষ্ঠানে ২০০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত করা যাবে না। অভিযোগ, সেই নির্দেশ মানা তো হচ্ছেই না, এমনকি নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না, নজরদারি চলছে না তার উপরেও। সেই অভিযোগ আরও দৃঢ় হচ্ছে সম্প্রতি বিধাননগর পুর এলাকার একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানের পরে। জানা গিয়েছে, বিয়েবাড়িতে যোগ দেওয়া ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সূত্রের খবর, ওই বিয়েবাড়িতে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় ২৫০ জন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন এসেছিলেন পুণে ও মুম্বই থেকেও। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজারহাট-গোপালপুর অঞ্চলের এক পাঁচতারা হোটেলে ওই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের পর থেকেই জ্বর এবং সামান্য কিছু উপসর্গ দেখা দেয় আমন্ত্রিতদের কয়েক জনের মধ্যে। তখন পরীক্ষা না করালেও, পরে আরও কয়েক জনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করান তাঁরা। দেখা যায়, যে ১০ জন পরীক্ষা করিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই করোনায় আক্রান্ত।
করোনার প্রকোপ কমতেই লাগামহীন জীবনযাত্রা শুরু করেছেন অনেকেই। রাস্তায়, দোকান-বাজারে মাস্ক না পরে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে বহু মানুষের মধ্যেই। ভিড়ের মধ্যেও মানা হচ্ছে না দূরত্ব-বিধি। এ সব নিয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও উদাসীনতার অভিযোগ উঠছে। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ওই বিয়েবাড়িতেও সিংহভাগ আমন্ত্রিত মাস্ক পরেননি।
এই গা-ছাড়া মনোভাব নতুন করে বিপদ ডেকে আনবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, “মাস্ক না পরার এই প্রবণতায় ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। নিরাপদ দূরত্বে থাকা, হাত স্যানিটাইজ় করা এবং মাস্ক পরা— এখনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। করোনা যায়নি, বরং কেরল বা মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন সচেতন না হলে গত বছরের পুনরাবৃত্তি হতেই পারে।’’ তাঁর মতে, যত দিন না প্রচুর সংখ্যক মানুষের টিকাকরণ হচ্ছে, এবং হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে, তত দিন সমস্ত রকম সতর্কতা মেনে চলা উচিত।
ওই বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে কয়েক জন এসেছিলেন পুণে এবং মুম্বই থেকে। মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই করোনার নতুন স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে সেখানে। পুণেতে ফের জারি হয়েছে লকডাউন। ওই সব জায়গা থেকে রাজারহাটের ওই বিয়েবাড়িতে আসা লোকজনের থেকে নতুন স্ট্রেন ছড়ানো নিয়েও আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
কিন্তু মানুষ যেমন অসচেতন, প্রশাসনের মধ্যেও কি যথেষ্ট সচেতনতা রয়েছে? ব্যাঙ্কোয়েট কিংবা অনুষ্ঠানবাড়ি ভাড়া নিলে কত জনকে আমন্ত্রণ করা যাবে, তার হদিস দেবেন কে? কে অনুষ্ঠানবাড়ির উপরে নজর রাখবেন?
বিধাননগর পুরসভার কমিশনার দেবাশিস ঘোষের বক্তব্য, ‘‘সে সব পুলিশের করার কথা।’’ বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফেও প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। বিধাননগর পুরসভার এক কর্তার কথায়, ‘‘এখন আর এ সবের উপরে নজরদারি রাখা হয় না।’’