কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। — ফাইল চিত্র।
আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার মামলার জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদনে বিরক্তি প্রকাশ করলেন কলকাতা প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। বৃহস্পতিবার ওই আবেদনের শুননিতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটলেই সেটাকে ‘হাইজ্যাক’ করার চেষ্টা চলে।’’
জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদন প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি জানতে চান, মামলার আবেদনকারী কে? এর পর তদন্তের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি প্রশ্ন করলে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ইতিমধ্যে ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে। ভিডিয়ো করা হচ্ছে। পরিবারকেও সে কথা জানানো হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তে অন্তত কাউকে রাখা উচিত ছিল। আইনজীবীকেও রাখতে পারতেন!’’ রাজ্যের আইনজীবী তখন সাফাই দিয়ে বলেন, ‘‘পরিবারকে বলা হয়েছিল। তারা কিছু জানায়নি।’’ কিছুটা বিস্ময়ের সুরে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম তখন বলেন, ‘‘পরিবার ময়নাতদন্তে উপস্থিত নেই। কিন্তু কত বার ময়নাতদন্ত হবে!’’
প্রসঙ্গত, বুধবার মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ডেকে পাঠিয়ে অশোক সিংহ নামে এক যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ তোলে তাঁর পরিবার। এই ঘটনার জেরে বুধবার সন্ধ্যায় অবরুদ্ধ হয়ে যায় কলেজ স্ট্রিট। পরিবারের দাবি, চুরির মোবাইল কেনার অভিযোগে যুবককে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন মারধরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছে পরিবার। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানান বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। একই সঙ্গে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসিকে অবিলম্বে অপসারণের দাবিও তোলেন তিনি।
কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সজলের করা মামলায় হাই কোর্টে মূলত তিনটি আর্জি জানানো হয়েছে। এক, ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে। দুই, কমান্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে হবে। তিন, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার সজলের আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল এই ঘটনায় জনস্বার্থ মামলা করতে চেয়ে উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সূত্রের খবর, পানের দোকানের মালিক অশোককে চুরি যাওয়া মোবাইল বেআইনি ভাবে কেনার অভিযোগে তলব করা হয়েছিল থানায়। সেখানে তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়, খুন তো দূরের কথা, ওই ব্যক্তিকে মারধরই করা হয়নি। তিনি নিজেই থানায় অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। তাতেই মাথা ফেটে যায় তাঁর, মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরিয়ে আসে। ‘অসুস্থ’ ব্যক্তিকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে জানা যায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। যদিও মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় করা একটি ফেসবুক লাইভের দৃশ্যে দেখা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির দেহ পড়ে রয়েছে থানার একটি ঘরের মেঝেতে । তাঁর দু’চোখ খোলা। দেহ নিথর। আত্মীয়স্বজনদের চিৎকার-চেঁচামেচির জবাবে কোনও কথা বলছেন না থানায় উপস্থিত কর্মীরা। পরে অবশ্য তাঁদের দেখা যায় কিছুটা সক্রিয় হয়ে ওই যুবকের দেহটিকে সেখান থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে। যদিও ওই ফেসবুক লাইভের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।