—প্রতীকী চিত্র।
থানায় ডেকে এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বার জানা গেল, মৃত্যুর আগে থানা থেকে ওই যুবক শেষ ফোনটি করেছিলেন এক স্থানীয় বিজেপি নেতাকে। ওই নেতার নাম মদন লাল। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ঘটনা নিয়ে যখন বিরোধীরা সিবিআই তদন্ত চেয়ে সরব, তখন মদন জানালেন, ফোনে বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে ঠিক কী কথা হয়েছিল ওই যুবকের।
মদন স্থানীয় বিজেপি নেতা। আর যে যুবকের মৃত্যু হয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায়, তাঁর নাম অশোককুমার সিংহ। অশোকের কলুটোলা লেনে একটি পান-বিড়ির দোকান আছে। সেই দোকানে যাতায়াত রয়েছে মদনলালের। তিনি জানিয়েছেন সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে আলাপ অশোকের। বুধবার যে তাঁকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে, সে কথাও মদনকে জানিয়েছিলেন অশোক। মদন বলেছেন, ‘‘বিকেলের দিকে ওর দোকানে গিয়েছিলাম, তখনই বলেছিল, থানা থেকে ডেকেছে। কী করব?’’
মদন বিষয়টিকে তখন অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দেননি। অশোককে বলেছিলেন, ‘‘ডেকেছে যখন যাও।’’ কিন্তু ঘটনা যে এত দূর গড়াবে, তা ভাবতেই পারেননি তিনি। মদন জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পর পর দু’টি ফোন আসে তাঁর কাছে। একটি ফোন করেছিলেন অশোক। অন্যটি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা থেকে। শেষ ফোনটিতে তাঁকে জানানো হয়, অশোক নামের ওই যুবক থানায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন, তাঁকে যেন নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগে অশোকের সঙ্গেও কথা হয় মদনের।
আমহার্স্ট স্ট্রিটের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ এনেছেন কলকাতা পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষও। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে সজল বুধবারই বলেছিলেন, অবিলম্বে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসিকে অপসারণের কথা। বৃহস্পতিবার সেই সজলেরই দলের স্থানীয় নেতা অবশ্য জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে শেষ ফোনে তাঁকে মারধরের কথা বলেননি অশোক।
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যা ৫টা ৪৩ মিনিটে অশোক এসেছিলেন থানায়। এর মধ্যে ৬টা ৫ মিনিটে তিনি একটি ফোন করেন। বিজেপি নেতা মদন জানিয়েছেন, ওই সময়ে তাঁকেই ফোন করেছিলেন অশোক। জানিয়েছিলেন, নামমাত্র দামে সম্প্রতি যে চোরাই ফোনটি কিনেছিলেন তিনি, সেই ফোন ফেরত দিয়ে দিতে বলছে পুলিশ। কিন্তু তাঁকে পুলিশ মারধর করছে বলে কিছু জানাননি অশোক।
পুলিশ অত্যাচার করলে ফোনে কথা বলার সময় সে বিষয়ে অন্তত কিছু আভাস পেতেন বলে মনে করছেন মদন। কিন্তু অশোকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাঁর তেমন কিছু মনে হয়নি বলেই জানিয়েছেন ওই বিজেপি নেতা। এমনকি, তাঁকে কান্নাকাটিও করতে শোনেননি মদন। তাঁর দাবি, মৃত্যুর আগে ওই শেষ ফোনে অশোক তাঁকে ফোনের কথা বলায় মদন বলেছিলেন, ‘‘ওঁরা যা বলছে তা-ই করো।’’ এর পরে আর কোনও কথা হয়নি তাঁর সঙ্গে। কিন্তু তার পরেই থানা থেকে ফোন পেয়ে অবাক হয়ে যান তিনি।
আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় চেনা-পরিচয় রয়েছে মদনের। ৬টা ৯ মিনিটে তাঁকে ফোন করে জানানো হয় অশোকের কথা। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন শুনে অশোকের বাড়ির লোককে নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন মদন। সেখান থেকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যায় মৃত্যু হয়েছে অশোকের।