আলিয়ার মিছিলে ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে পুলিশ সংঘর্ষের অভিযোগ উঠলে, আন্দোলনকারীদের সমর্থনে আবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও। ছবি: পিটিআই।
ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃ্ত্যুর তদন্ত চেয়ে ছাত্র আন্দোলন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে একের পর এক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। আনিসের আলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের পর এ বার যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি এমনকি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও শামিল হলেন আনিস মৃত্যুর প্রতিবাদ আন্দোলনে।
মঙ্গলবারই আনিসের ‘অপরাধী’দের গ্রেফতারি এবং কঠোর শাস্তির দাবিতে পথে নেমেছিলেন আলিয়ার ছাত্র ছাত্রীরা। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেও এসএফআইয়ের ডাকে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা।
আলিয়ার মিছিলে ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে পুলিশ সংঘর্ষের অভিযোগ উঠলে, আন্দোলনকারীদের সমর্থনে আবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও। আন্দোলনকারীদের অনেককেই মঙ্গলবার পুলিশ আটক করেছিল। এমনকি মারধর করেছিল বলেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। তারই প্রতিবাদে সন্ধে ৬টা থেকে রাতভর অবস্থান বিক্ষোভ হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র-ছাত্রীদের উপর পুলিশের ‘অমানবিক আচরণ’-এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয় প্রেসিডেন্সি কলেজেও। পরে বুধবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীরা একটি সাংবাদিক বৈঠক করে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আনিসের মৃত্যুর বিচার চেয়ে যে আন্দোলন তাঁরা শুরু করেছিলেন, তা অপরাধী গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা বৈঠকে এ-ও বলেন যে, ‘‘হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি না হলে গত কাল যে সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী পথে নেমেছিলেন, তার হাজার গুণ ছাত্রছাত্রী রাজপথে নামবেন। বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ আগের দিন ভাবতে পারেনি আন্দোলন এমন তীব্র হতে পারে। আগামী দিনে কী হতে চলেছে সেটা লালবাজারও ভাবতে পারবে না।’’
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, আনিসের মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে মঙ্গলবার আলিয়ার পড়ুয়াদের সংখ্যালঘু দফতরে একটি ডেপুটেশন দেওয়ার কথা ছিল। দেখা করার কথা ছিল সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু কলেজস্ট্রিট চত্বরেই তাঁদের আটকানো হয়। শান্তিপূর্ণ মিছিলকে কোনও ব্যারিকেড ছাড়াই বাধা দেওয়া হয়। পরে ছাত্রছাত্রীদের কয়েকজন প্রতিনিধি মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। উল্টে ছাত্রদের উপর আচমকাই হামলা করে পুলিশ। বুধবার ঘটনাটির কথা জানিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘‘এই ঘটনার নিন্দা করছি। পুলিশের কাছে এমন অমানবিক আচরণ আশা করিনি আমরা। ওঁরা আসামির বদলে বিচারপ্রার্থীদের ধরে জেলে পুরছে।’’
পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগও এনেছেন আন্দোলনকারীরা। সাংবাদিক বৈঠকে আলিয়ার ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘‘অনেক ছাত্রী যাঁরা পড়ে গিয়েছিলেন বা মাটিতে বসে পড়েছিলেন, তাঁদের উপরেও লাঠি চালানো হয়েছে। কোনও মহিলা পুলিশ ছিলেন না। মেয়েদের পুরুষ পুলিশকর্মীরাই হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। অনেকের পায়ে আঘাত করা হয়েছে। ঠোট ফেটে রক্ত পড়েছে। গলা এমন ভাবে চেপে ধরা হয়েছিল যে শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার অবস্থা হয়েছিল। এরপরও পুলিশ আমাদের ৫৮ জনকে আটক করে। তার মধ্যে ১৮ জন মেয়ে ছিল। আর ৪০ জন ছেলে।’’ পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়। তবে আন্দোলনকারীরা এখনই হাল ছাড়তে নারাজ। তাঁরা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘‘পুলিশ যদি ভাবে ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা করে লাঠি চালিয়ে আন্দোলন দমিয়ে দেবে তবে ভুল করছে। আনিসের হত্যার প্রতিবাদে আমরা পথে নেমেছি পথেই থাকব। যতদিন না অপরাধী শাস্তি পাচ্ছে ততদিন।’’
বুধবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তরফে মানববন্ধনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের গ্রেফতার, তাঁদের উপর হামলা এবং আনিস হত্যার প্রতিবাদে বুধবার কালাদিবস পালন করবেন তাঁরা। আলিয়ার আন্দোলনকারীরা প্রকাশ্যেই প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছে, ‘‘আন্দোলন আরও বাড়বে। দেখব কত গারদ আছে! আমাদের কতজনকে সেখানে ভরতে পারে।’’