Copa America 2021

Copa America: ইলিশে জয়ের উদ্‌যাপন মেসির দেশের মেয়ের

অতিমারিতেও কাকভোরে ঘুম থেকে ওঠা কলকাতায় অনেক দিন বাদে যেন ‘ফুটবলের মহালয়া’ মনে হচ্ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১ ০৬:২৪
Share:

জয়োল্লাস: প্রিয় দলের পতাকা ও মেসির ছবি নিয়ে পথে আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। রবিবার, বাইপাসে। (ডান দিকে) রোক্সানা আকোস্তা। নিজস্ব চিত্র।

প্রিয় দল জিতলে ইলিশে উদ্‌যাপনের বাঙালি রীতিটা এত দিন জানা হয়নি। তবে কলকাতায় বছর ছয়েক থাকার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীল-সাদা প্রীতির কথা না জেনে উপায় নেই রোক্সানার। বেহালার বাঙালি বাড়ির আর্জেন্টাইন বধূ রোক্সানা আকোস্তা সোসা দিব্যি মজে গিয়েছেন বাঙালির ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা তরজায়।

Advertisement

রবিবার সকালে কোপা আমেরিকার ফাইনালের পরে শহর কলকাতার নতুন রসিকতা— ‘২০২১টা সত্যিই নীল-সাদার! এই বছরটায় শুধু একটাই রং। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে আর্জেন্টিনাই জিতল’। রবিবার দুপুরে ঠাকুরপুকুর থেকে পিসিশাশুড়ির পাঠানো ইলিশে এমন জয় উদ্‌যাপনের পরে রোক্সানা হাসছিলেন, “সময় লাগলেও নিজে কাঁটা বেছে ইলিশ আমি খেতে পারি! পিসি আমার জন্যই ইলিশ করেছিলেন। তবে প্রিয় ক্লাব বা দল জিতলে ইলিশ খাওয়ার ব্যাপারটা আমার জানা ছিল না। আর্জেন্টিনার জয়ের দিনে ইলিশ খেতে সত্যি দারুণ লাগছে!” কয়েক বছর আগে এ শহরের রাজপথ, পার্কের দেওয়াল, উড়ালপুলের ধারে নীল-সাদা রং দেখে রোক্সানা বর চিরঞ্জীব ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘এখানে কি সকলেই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার?’’ বর হেসে জানিয়েছিলেন, নীল-সাদা ‘ম্যাডাম সিএম’-এর প্রিয় রং। রোক্সানা বলছেন, ‘‘ফেসবুকে আলাপের পরে ২০১৫-য় চিরঞ্জীবকে বিয়ে করা ইস্তক কলকাতায় আছি! এত দিনে শহরটা সত্যি আর্জেন্টিনার মনে হচ্ছে।’’

অতিমারিতেও কাকভোরে ঘুম থেকে ওঠা কলকাতায় অনেক দিন বাদে যেন ‘ফুটবলের মহালয়া’ মনে হচ্ছিল। তখন থেকেই চলছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মধ্যে পা টানাটানি। ডি মারিয়ার গোল বা নেমারের ‘অভিনয়’ নিয়েও সংলাপের ঠোকাঠুকি। ম্যাচ শেষে অবশ্য শুধু একটাই রং। কলকাতা শহর জুড়ে নীল-সাদার দাপটে মিইয়ে থাকা ব্রাজিলের সমর্থকেরাও অবশ্য ঠেস দিতে ছাড়ছেন না। আর্জেন্টিনা-ভক্তদের খোঁচা দিয়ে রসিকতা, যাক এই সব একালের নীল-সাদা পার্টি প্রথম ইউটিউবের বাইরে, জীবদ্দশায় দলটাকে ট্রফি জিততে দেখল! আবার অনেকেরই সদ্যপ্রয়াত দিয়েগো মারাদোনার কথা মনে পড়েছে। অনেক ব্রাজিলভক্তেরও বক্তব্য, ওই লোকটার জন্যই হতাশার মধ্যেও সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন। ব্রাজিল-সীমানায় আর্জেন্টিনার কোরিয়েন্তেস প্রদেশের মেয়ে বলছেন, ‘‘জয়ের পরে আমি কাঁদছিলাম জানেন! মনে হচ্ছিল যদি ছুট্টে দেশে চলে যাওয়া যেত। খুঁজে খুঁজে দেশে জয় উদ্‌যাপনের কয়েকটা ভিডিয়ো পোস্ট করে একটু শান্তি হল।’’ শনিবার রাতে রোজকার মতোই দেড়টা নাগাদ ঘুমোতে গিয়েছিলেন রোক্সানা। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে সকাল-সকাল উঠে বর, বৌ মিলে খেলা দেখেছেন।

Advertisement

কলকাতায় ব্রাজিলভক্তদের রসিকতার কথায় হাসতে হাসতেই বলছিলেন, ‘‘২৮ বছর বাদে ট্রফি জেতাটা কিন্তু সত্যি বিরাট ব্যাপার।’’ মেক্সিকোয় দিয়েগোর বিশ্বজয়ের বছরে রোক্সানার জন্ম। ১৯৯৩-এ আর্জেন্টিনার শেষ বার কোপা জয়ের স্মৃতিও এখন ধূসর। রোক্সানার এখন বার বার মনে হচ্ছে, মেসির অন্তত এইটুকু প্রাপ্য ছিল। ফেসবুকে মেসির ছবি পোস্ট করেছেন। রবিবার বিকেলে বলছিলেন, ‘‘আর্জেন্টিনায় আমার আত্মীয়, বন্ধুরা বেলা করে ঘুম থেকে উঠবে বলেই দুপুর পর্যন্ত ফোন করছি না। কিন্তু আমার বাড়ি থেকে কয়েক ঘণ্টার দুরত্বে মেসির শহর রোজারিয়োয় আমার পিসিকে একটা ফোন করতেই হবে।’’ দিয়েগোর মৃত্যুর পরেও কয়েক দিন ঘোরের মধ্যে ছিলেন। আবেগের সেতুতে সওয়ার হয়ে এখন যেন বেহালা নয়, আর্জেন্টিনাতেই রয়েছেন রোক্সানা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement