গঙ্গার সংশ্লিষ্ট ঘাটগুলি প্লাস্টিক-বর্জ্যে ভর্তি যা গঙ্গাকে আরও দূষিত করে চলেছে। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা ও সংলগ্ন সমস্ত গঙ্গার ঘাটের ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকা সম্পূর্ণ প্লাস্টিকমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ঘাট সংলগ্ন এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক। জাতীয় পরিবেশ আদালতের গঙ্গা দূষণ সংক্রান্ত মামলায় এমনই দাবি উঠল আবেদনকারীর তরফে। এই দাবির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে আবেদনকারী জানিয়েছেন, গঙ্গার সংশ্লিষ্ট ঘাটগুলি প্লাস্টিক-বর্জ্যে ভর্তি। যা গঙ্গাকে আরও দূষিত করে চলেছে।
প্রসঙ্গত, আহিরীটোলা, নিমতলা, সুতানুটি, কুমোরটুলি, কাশীপুর ও মায়ের ঘাট কী ভাবে জঞ্জালে ভরে উঠেছে, তা নিয়ে গত বছর পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সুপ্রভা প্রসাদ। একে একে সেই মামলায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্য পরিবেশ দফতর, রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর, কলকাতা ও হাওড়া পুরসভা, কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর, রেল, ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা বাদ দিয়েও বালি, পানিহাটি, বরাহনগর, কামারহাটি, উত্তরপাড়া-কোতরং-সহ একাধিক পুরসভা যুক্ত হয়। তাদের প্রত্যেকের তরফে দেওয়া হলফনামার পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা হলফনামা জমা দিয়ে প্লাস্টিক-বর্জ্য থেকে ঘাটগুলি মুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন সুপ্রভা।
এই মামলায় গঙ্গার দূষণ রোধে রাজ্য সরকার ও গঙ্গা সংলগ্ন পুরসভাগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের দিকটি নিয়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছিল আদালত। তারা জানিয়েছিল, গঙ্গার ঘাটগুলির কী অবস্থা, সে ব্যাপারে কলকাতা, হাওড়া, কামারহাটি, পানিহাটি, বালি, বরাহনগর-সহ একাধিক পুরসভা শুধু নিজেদের এলাকার কথাই বলেছে। সে কারণে অক্টোবরে পরিবেশ আদালত রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চেয়ারম্যান করে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল। বলেছিল, যে সব নিকাশি নালার মাধ্যমে তরল বর্জ্য গঙ্গায় মিশছে, সেগুলি বন্ধ করা এবং ঘাট ও ঘাট সংলগ্ন এলাকায় আবর্জনা ছুড়ে ফেলা বন্ধ করা নিশ্চিত করতে হবে কমিটিকে। ওই কাজের রূপায়ণের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার উল্লেখ করতে হবে রাজ্য সরকারকে।
হলফনামায় সুপ্রভা জানিয়েছেন, গঙ্গার ঘাট কী ভাবে পরিষ্কার রাখা যায়, সে ব্যাপারে সংলগ্ন পুরসভাগুলি একত্রিত হয়ে রূপরেখা ঠিক করুক। সেখানে তরল ও কঠিন বর্জ্যের দূষণ কী ভাবে রোধ করা যাবে, তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকা দরকার। সুপ্রভার আইনজীবী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “গঙ্গা দূষণ রুখতে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।” যার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসে মামলার শুনানিতে নিজেদের অবস্থান জানাতে মুখ্যসচিবের তরফে হলফনামা দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে রাজ্য। পরবর্তী শুনানি ১৮ জানুয়ারি।