ত্রাতা: শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে নিয়াজ় (ডান দিকে)। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র
থ্যালাসেমিয়ার কারণে বছর ১১-র বালকটির কুড়ি দিন অন্তর রক্তের প্রয়োজন হয়। শুক্রবার ছিল রক্ত দেওয়ার দিন। কিন্তু লকডাউনের দিনে বৃষ্টিতে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে ছেলের রক্তের জোগাড় করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লেন বাবা। দুর্ঘটনার পরে রক্তদান করে কী ভাবে ছেলের জন্য রক্ত নেবেন, এই চিন্তায় পড়া বাবার সহায় হল পুলিশই। রক্ত দিয়ে তাঁকে চিন্তামুক্ত করলেন হাওড়া ব্রিজ ট্র্যাফিক গার্ডের এক সিভিক ভলান্টিয়ার।
শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ হাওড়ার ঘুসুড়ির বাসিন্দা শুভেন্দু ভক্ত বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন ছেলের জন্য রক্ত আনতে। ব্লাড ব্যাঙ্কে নিজের রক্ত দিয়ে ছেলের জন্য ও-পজ়িটিভ রক্ত সংগ্রহের কথা ছিল তাঁর। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে হাওড়া সেতুতে মোটরবাইকের চাকা পিছলে যাওয়ায় তিনি বাইক-সহ পুলিশের গার্ডরেলে ধাক্কা মেরে ছিটকে পড়ে যান। শুভেন্দুবাবু তখনই বুঝতে পারেন, ওই অবস্থায় আর রক্ত দিয়ে ছেলের জন্য রক্ত সংগ্রহ করার মতো অবস্থায় নেই তাঁর শরীর।
পুলিশ জানায়, ওই দুর্ঘটনা ঘটলে ছুটে গিয়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা শুভেন্দুবাবুকে রাস্তা থেকে তোলেন। লকডাউনে কেন বেরিয়েছেন তা-ও তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয়। শুভেন্দুবাবু সব কথা খুলে বলেন পুলিশকে। রক্ত জোগাড় সংক্রান্ত কাগজপত্রও দেখান। পুলিশের কাছেই রক্ত জোগাড় করা নিয়ে সাহায্য চান ওই ব্যক্তি। তখন নিজে থেকে রক্ত দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন মহম্মদ নিয়াজ় নামে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার।
শুভেন্দুবাবু জানান, তাঁর ছেলের এক বছর বয়সের পরে থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। তখন থেকেই নিয়মিত তাকে রক্ত দিতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘করোনার সময়ে রক্তের সঙ্কট থাকায় গত কয়েক মাস ধরে ডোনার নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে ছেলের জন্য ‘ও’-পজিটিভ রক্ত জোগাড় করছি। আজ ডোনার না পেয়ে ঠিক করি আমিই রক্ত দেব। কিন্তু রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে।’’
তিনি বলেন, “হাওড়া সেতুর উপরে বৃষ্টির কারণে যেন ধোঁয়ায় ভরে রয়েছে বলে মনে হচ্ছিল। দেখতে না পেয়ে সামনের গার্ডরেলে জোরে ধাক্কা মেরে ছিটকে পড়ি।” তাঁর সব কথা শুনে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিতে চাইলেও শুভেন্দুবাবু রক্তের জন্য পুলিশের কাছে সাহায্য চান। তখন হাওড়া সেতুর ট্র্যাফিক গার্ডের সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়াজ় এগিয়ে আসেন। গার্ডের ওসি অমরেশ ঘোষও তাঁকে শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে পাঠিয়ে দেন। শুভেন্দুবাবু নিয়াজ়কে নিয়ে সিআইটি রোডে পদ্মপুকুরের একটি ব্লাড ব্যাঙ্কে পৌঁছন। নিয়াজ়ের রক্তের গ্রুপ এ পজ়িটিভ। তাঁর রক্তের বিনিময়ে শুভেন্দুবাবু ছেলের জন্য ও-পজ়িটিভ রক্ত নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। ধন্যবাদ জানান পুলিশকেও।