—প্রতীকী চিত্র।
তিন বছর বন্ধ থাকার পরে বাজি বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার থেকে নবান্নের খোলা পোর্টালে এই লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ৮৮৪টি লাইসেন্স দেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে বাজি ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রের খবর। আরও ১২০০ আবেদন এখনও বাকি। এ নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীদের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই সরকার বাজির লাইসেন্স দিচ্ছে। পুজোর মুখে আবারও বড় কোনও বিস্ফোরণে প্রাণহানি ঘটতে পারে। এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা।
এগরা, মহেশতলা, বজবজ, মালদহ, দত্তপুকুরের মতো একাধিক জায়গায় গত কয়েক মাসে অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্ন উঠেছে, করোনা-কাল থেকেই যেখানে বাজির লাইসেন্স নবীকরণ করা হয়নি, সেখানে এমন কারখানা দিনের পর দিন চলছিল কী ভাবে? এর মধ্যেই সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, বাজির ক্লাস্টার তৈরি করা হবে। কিন্তু তার আগেই প্রচার হয়ে যায় যে, বাজি বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া হবে। বাজি ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের এক নেতার সঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের দফায় দফায় বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার থেকে লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সূত্রের খবর, সেই পথেও কিছু সমস্যা হয় পুলিশ রিপোর্ট নিয়ে। জানা গিয়েছে, লাইসেন্সের ৮৪টি আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। কারণ, ওই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাজি সংক্রান্ত পুলিশি মামলা রয়েছে। ‘আতশবাজি উন্নয়ন সমিতি’র চেয়ারম্যান বাবলা রায় বললেন, ‘‘আসলে একের পর এক বিস্ফোরণের সময়ে কোনটা বোমা আর কোনটা বাজি, পুলিশ দেখেনি। যা পেরেছে, তুলে নিয়ে গিয়েছে। যে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাঁদের আবেদনই বাতিল হয়ে গিয়েছে।’’ কিন্তু ক্লাস্টার তৈরির আগেই এ ভাবে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে কেন? বাবলার উত্তর, ‘‘ক্লাস্টার পুজোর পরে হবে। আগে মৃতপ্রায় এই শিল্পটাকে বাঁচাতে হবে!’’
পরিবেশকর্মী তথা ‘সবুজ মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক নব দত্ত বললেন, ‘‘আসলে এখানে গা-জোয়ারি চলছে। কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, শহরে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমোদিত বাজি বাজার ছাড়া বাকি সব বেআইনি। সে ক্ষেত্রে হাজার হাজার বাজি বিক্রির লাইসেন্স দেওয়ার অর্থ কী?’’ প্রশাসনের তরফে অবশ্য উত্তর মেলেনি।
এর মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়েছে সরকারি উদ্যোগে হওয়া বাজি বাজার নিয়েও। এমনিতে কলকাতায় এমন বাজি বাজার বসে টালা, বেহালা, কালিকাপুর, বিজয়গড় এবং শহিদ মিনার চত্বরে। কিন্তু শহিদ মিনারের বাজার নিয়ে জটিলতা চলছে গত বেশ কয়েক বছর ধরে। বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, বড়বাজারের বাজি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বেই কলকাতায় প্রথম বাজি বাজার বসে। ১৯৯৫ সালে প্রথম সেই বাজি বাজার বসেছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের উল্টো দিকের ময়দানে। ১৯৯৬ সালে ওই বাজারেই রেকর্ড সংখ্যক, প্রায় ১১৭টি বাজির স্টল বসে। ২০০৬ সালে জায়গা নিয়ে জটিলতায় বাজারটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পার্ক স্ট্রিটের কাছের মাঠে। ২০০৭ সালে সেখান থেকে ওই বাজি বাজার স্থানান্তরিত হয় শহিদ মিনারের কাছে ময়দানে। ২০১৭ পর্যন্ত সেখানেই চলা বাজি বাজারটির নাম হয়ে যায় শহিদ মিনার বাজি বাজার। ২০১৮ সালে বাজারটি সরানো হয় বিবেকানন্দ পার্কে। কিন্তু পরের বছরই সেটি ফের শহিদ মিনারে স্থানান্তরিত হয়। ওই বছরই শেষ বার বসেছিল ওই বাজি বাজার। পরিবেশ রক্ষার্থে শহিদ মিনারের বাজি বাজার নিয়ে নানা মহল থেকে প্রতিবাদ আসতে থাকে। জটিলতা তৈরি হয় সেনাবাহিনীর অনুমতি পেতেও। কিন্তু চলতি বছরে আবার শহিদ মিনারেই বাজি বাজার বসানোর তোড়জোড় চলছে।
‘বড়বাজার ফায়ারওয়ার্কস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক শান্তনু দত্ত বললেন, ‘‘পুরসভার তরফেই সেনার সঙ্গে সব কথা বলা হচ্ছে। এ বার ময়দানে বাজি বাজার বসার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’’ পরিবেশকর্মীরা যদিও আপত্তি তুলে বলছেন, ‘‘মানুষের পায়ের চাপ পড়বে, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভেবে যেখানে বইমেলা পর্যন্ত সরিয়ে নেওয়া হল, সেখানে বাজি-বোমার বাজার শহিদ মিনারে বসে কী করে?’’ জটিলতা কোন পর্যায়ে পৌঁছয়, জানা যাবে দিনকয়েক পরেই।