ঠেকেও শেখেনি নন্দরাম, ছিল না ফায়ার লাইসেন্স

গত শনিবার বিকেল তিনটে নাগাদ আগুন লাগে ব্রেবোর্ন রোডের তেরোতলা উঁচু নন্দরাম মার্কেট ভবনে। ন’তলার একটি বন্ধ গুদামঘরে আগুন লাগলে তা পাশের একটি গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। তবে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেও জলের অভাবে দমকল অগ্নি-নির্বাপণের কাজ চালিয়ে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০২:৪৩
Share:

আঁধার: নন্দরাম মার্কেটে ইমার্জেন্সি আলো জ্বালিয়ে কাজ করছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ

১১ বছর আগে চোখের সামনে সব ভস্মীভূত হতে দেখেও নন্দরাম মার্কেটের যে হুঁশ ফেরেনি, গত শনিবার দুপুরের অগ্নিকাণ্ডে সেটাই স্পষ্ট হয়ে গেল। কারণ, প্রাথমিক তদন্তের পরে দমকল জানিয়েছে, ওই মার্কেটের ফায়ার লাইসেন্স নবীকরণ করানো ছিল না। আগের অগ্নিকাণ্ডের পরে অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি বলে দমকলের দাবি। সব মিলিয়ে বিপদসঙ্কুল অবস্থাতেই নন্দরাম মার্কেট চলছিল বলে জানালেন দমকলের ডিজি জগমোহন।

Advertisement

গত শনিবার বিকেল তিনটে নাগাদ আগুন লাগে ব্রেবোর্ন রোডের তেরোতলা উঁচু নন্দরাম মার্কেট ভবনে। ন’তলার একটি বন্ধ গুদামঘরে আগুন লাগলে তা পাশের একটি গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। তবে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেও জলের অভাবে দমকল অগ্নি-নির্বাপণের কাজ চালিয়ে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ। এমনকি, মার্কেট ভবনের জলাধারেও পর্যাপ্ত জল ছিল না। কাজ করেনি স্প্রিঙ্কলারও। প্রায় তিরিশ মিনিট দমকলকর্মীদের কার্যত বসে থাকতে হয়। এর মধ্যেই একটি গুদাম থেকে অন্য গুদামে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে পাম্পিং স্টেশন থেকে জল নিয়ে এসে দমকল আগুন নেভায়। ওই ঘটনার পরে মার্কেটের ফায়ার লাইসেন্স নবীকরণ করা ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

২০০৮ সালের ১১ জানুয়ারি রাতে আগুন লাগে নন্দরাম মার্কেটের পাশের ত্রিপলপট্টিতে। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় নন্দরাম মার্কেট। এর পরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে ২০১৬ সালে ওই মার্কেট ফের খোলার অনুমতি দেয় প্রশাসন। তার আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নতুন করে মার্কেট ভবন তৈরি করা হয়। দমকল দফতরও অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে একাধিক পরামর্শ দেয়। সেই পরামর্শ মেনে কাজ করার পরে তবেই সেই সময়ে ছাড়পত্র পায় নন্দরাম মার্কেট। তবে তার পর থেকে তিন বছর কেটে গেলেও ফায়ার লাইসেন্স নবীকরণ করা নিয়ে ওই মার্কেটের কেউই আর মাথা ঘামাননি বলে অভিযোগ।

Advertisement

দমকলের এক আধিকারিক জানান, নন্দরাম মার্কেটের মতো ভবনগুলিতে লাগানো অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে বাড়ির মালিকদের প্রতি তিন মাস অন্তর দমকল দফতরে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। যে সংস্থা ওই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে, মান খতিয়ে দেখে তাদেরই সেই রিপোর্ট দেওয়ার কথা। যা দমকল দফতরে জমা করতে হয়। রিপোর্ট ঠিকঠাক থাকলে দমকল ফায়ার লাইসেন্স নবীকরণের শংসাপত্র দিয়ে দেয়। কিন্তু নন্দরামের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলেই অভিযোগ।

অগ্নিকাণ্ডের পরে ওই মার্কেট আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। সেখানে কোনও মতে মোমবাতি জ্বেলে কাজ করছেন কয়েক জন ব্যবসায়ী। ভরতলাল আগরওয়াল নামে তেমনই এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘এক জনের গুদামঘরে আগুন লাগল। যার জন্য আমাদের সকলের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। মালিক টাকা নিয়েও যদি অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক না রাখে, তার দায় কি আমাদের?’’ নন্দরাম মার্কেট ভবনের মালিক মানিকচাঁদ শেঠিয়াকে এ দিন বারবার ফোন করা হলেও তিনি কেটে দেন। টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি।

দমকলের ডিজি জগমোহন অবশ্য বললেন, ‘‘অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে ওদের বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওরা তা মানেনি। ফায়ার লাইসেন্স নবীকরণ করায়নি।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, ‘‘গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটা হবে। সে ক্ষেত্রে মামলাও করা হতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement