প্রেমিকার সামনেই ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় যুবকের। প্রতীকী ছবি।
প্রেমিকা ও তাঁর পরিবারের লোকজনের সামনেই নিজের বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাগুইআটির অশ্বিনীনগরে এই ঘটনা ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য।
বাগুইআটি থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সৌম্যদীপ সাহা (২৬)। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাড়ারই এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। রবিবার রাতে তাঁদের দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তি হয়। তার পরে প্রেমিকার সামনেই ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। পুলিশ ঘটনাটিকে প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বলে মনে করলেও মৃতের পরিবারের অভিযোগ, সৌম্যদীপকে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সৌম্যদীপের মা রীতা সাহার আবার দাবি, ঝগড়া চলাকালীন তাঁর ছেলেকে ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য একাধিক বার প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে।
ওই যুবকের বাড়ি অশ্বিনীনগরের পূর্বাশা এলাকায়। আকস্মিক এই ঘটনায় স্তম্ভিত প্রতিবেশীরাও। তাঁরা জানান, রাতের দিকে বাড়ির নীচে চেঁচামেচি শুনেছিলেন তাঁরা। সেই ঘটনা যে যুবকের মৃত্যু পর্যন্ত গড়াবে, তা ভাবতে পারেননি। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। সৌম্যদীপের পরিবারের লোকজনের দাবি, তাঁরা ওই তরুণী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বাগুইআটি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন, গত এক বছর ধরে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সৌম্যদীপের। তাঁর মৃত্যুর পরে তরুণী ও তাঁর মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বাগুইআটি থানার পুলিশ।
তবে দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে প্রাথমিক ভাবে যে তাঁর আপত্তি ছিল, সে কথা স্বীকার করেছেন সৌম্যদীপের মা। যদিও সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘আমি পরে ওদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছিলাম। ছেলে নতুন চাকরি পেয়েছে। ওকে বিয়ের জন্য ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু, ছেলে সময় চাইছিল। তা নিয়েই অশান্তি হয়। ওই মেয়েটি, ওর মা এবং সঙ্গে থাকা কয়েক জন এমন ভাবে বাড়ির নীচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিলেন যে, সবাইকে আমরা বাড়ির ভিতরে আসতে বলি। ছেলের সঙ্গে ওঁদের তুমুল ঝগড়া হয়। ছাদে উঠেই কথা হচ্ছিল। আমার মনে হয়, ঝগড়ার সময়ে ওকে ছাদ থেকে ধাক্কা মারা হয়েছে।’’ সেই সময়ে তিনি ঘরে তাঁর অসুস্থ স্বামীকে সামলাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন রীতা।
পুলিশ জানিয়েছে, যুবকের পরিবারের তরফে দু’দফায় অশান্তির কথা জানানো হয়েছে। প্রথমে এক দফা গোলমালের পরে তরুণীরা চলে যান। পরে রাতের দিকে আবার তাঁরা ফিরে আসেন। ঘটনার সময়ে তরুণীর সঙ্গে তাঁর এক বন্ধুও ছিলেন। তিনিও সৌম্যদীপের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বলে জেনেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরে তরুণীকে এক জনের বাইকে চেপে চলে যেতেও দেখা যায়। খবর পেয়ে বাগুইআটি থানার পুলিশ গিয়ে সৌম্যদীপের দেহ উদ্ধার করে ভিআইপি রোডের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ দিন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সৌম্যদীপের দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে।