Durga Puja 2023

বেহালায় দুর্গাভিযানে বিদেশি শিল্পী জুটি

কলকাতার পুজোর বিদেশি-সংযোগ অবশ্য নতুন নয়। ২০১৩ সালে হাতিবাগান নবীন পল্লির পুজো মাতিয়েছিলেন করাচির বিখ্যাত ট্রাক-আর্টের সঙ্গে যুক্ত চৌকস পাকিস্তানি শিল্পীরা।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৪১
Share:

পুজোমণ্ডপে মার্টিনা ও বেনইয়ামিন। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুজো নিয়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে পড়াশোনা শুরু দু’জনের। এর পরে নেদারল্যান্ডস থেকে কলকাতায় এসে কুমোরটুলি আর ‘নিজেদের পাড়ার পুজো’ নিয়েই মেতে আছেন তাঁরা। বেনইয়ামিন আর মার্টিনা সোৎসাহে বলছিলেন, “ওটা ঐতিহ্য আর এটা নতুন, বুঝেছি! আবার নতুনের মধ্যেও পুরনোকে নতুন করে ফিরে দেখা আছে। এটা দারুণ লাগছে!”

Advertisement

ওলন্দাজ তরুণ, ২৬ বছরের বেনইয়ামিন পম্পো থাকেন নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে। ২৩ বছরের মার্টিনা পেকালা আদতে পোলিশ। বাবার চাকরি সূত্রে ছোটবেলা পোল্যান্ড, চিনে কাটানোর পরে এখন তিনি রটরডামের বাসিন্দা। আপাতত দু’জনের পাড়া বলতে বেহালার ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে ‘নূতন দল’-এর পুজো প্রাঙ্গণ। পাশেই ক্লাবঘর লাগোয়া ফ্ল্যাটে মাসখানেক হল থাকছেন দু’জনে। থিম-শিল্পী অয়ন সাহার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেহালার নামী পুজো মণ্ডপে নিজেদের শিল্পকলা মেলে ধরছেন ওই তরুণ-তরুণী। ইউট্রেক্টের এইচ কে স্কুল অব আর্টসের এই দুই প্রাক্তনী রীতিমতো ‘ইন্টারভিউ’ দিয়ে দুর্গাপুজোয় জড়িয়েছেন। কলকাতার পুজো মেলে ধরার একটি মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত, স্থপতি সায়ন্তন মৈত্র বলছিলেন, “কলকাতার পুজোকে আন্তর্জাতিক পরিসরে মেলে ধরার এটাও একটা দিক। পুজো যখন সর্বজনীন, দেশ-বিদেশের শিল্পীরা পুজোয় যুক্ত হলে তো ভালই!” আমস্টারডামের রাইকার্ড মিউজ়িয়ম, এইচ কে স্কুল অব আর্টসের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করে তরুণ শিল্পীদের বাছাই করা হয়েছে।

কলকাতার পুজোর বিদেশি-সংযোগ অবশ্য নতুন নয়। ২০১৩ সালে হাতিবাগান নবীন পল্লির পুজো মাতিয়েছিলেন করাচির বিখ্যাত ট্রাক-আর্টের সঙ্গে যুক্ত চৌকস পাকিস্তানি শিল্পীরা। একডালিয়ার মণ্ডপে সুদৃশ্য সড়ক নির্মাণ করেন জার্মান শিল্পীরা। ২০১৪ সালে হরিদেবপুর বিবেকানন্দ পার্ক অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজোয় পার্থ দাশগুপ্তের থিমের সঙ্গতে কলকাতা নিয়ে অসাধারণ সব ছবি আঁকেন আমেরিকান শিল্পী ট্রেসি লি স্টাম। এই ধরনের উদ্যোগের ধারাবাহিকতাই বেনইয়ামিন-মার্টিনাদের কাজে।

Advertisement

দু’জনে আবার ভিডিয়োগ্রাফিতে ওস্তাদ। নূতন দলের থিমে কলকাতার প্রিয় ফুচকারও ভূমিকা আছে। মণ্ডপ প্রদর্শনের জন্য মিনিট দুয়েকের একটি অ্যানিমেশন ভিডিয়োয় ফুচকাগাড়ির গল্প বলেছেন দু’জনে। আইপ্যাডে নিজেদের কাজ দেখাতে দেখাতে বেনইয়ামিন বলেন, “আমাদের অ্যানিমেশনের আঁকায় ‘চালাদুর্গার’ প্রভাব!” মার্টিনা শুধরে দেন, “ওটা ‘চালাচিট্রা’ (চালচিত্র) হবে রে!” কলকাতায় ফুচকা-অভিযানেও নেমেছেন তাঁরা! বেনইয়ামিনের কথায়, “একটু ভয় করলেও আমাদের ওই স্পাইসি (ঝাল) ফুচকাই দারুণ লেগেছে!”

পুজোকর্তা সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “এঁরা দু’জনেই কিন্তু নিরামিষাশী। শুক্তো, ধোঁকা, পরোটা, আলুভাজা ভালবেসে খাচ্ছেন!” বাঙালি খাবারে মুগ্ধ দুই শিল্পী! মার্টিনা অবশ্য বলছিলেন, এতটা মশলাদার রান্নায় তাঁর অভ্যেস নেই। এক ধরনের পরিবেশ সচেতনতা থেকে দু’জনে আমিষ ছাড়লেও বেনইয়ামিন মাঝেমধ্যে মাছ খান। এখানে এসে শিঙাড়া, বোঁদের ভক্ত হয়েছেন। বোঁদে বোঝাতে বললেন, “ওই যে টুকটুকে ক্যাভিয়ারের (রুশদেশের মহার্ঘ মাছের ডিম) মতো মিষ্টিটা!”

কলকাতার কাজ শেষে শান্তিনিকেতনের শিল্পকলা শিক্ষায়তনও দেখতে চান দু’জন। বেহালার পাড়ায় মানুষে-মানুষে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা দেখেও পুলকিত তাঁরা। বলছেন, ইউরোপে শিল্পকলা আর্ট গ্যালারিতে সীমাবদ্ধ। একসঙ্গে এত মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্যই কলকাতার পুজোর তুলনা নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement