প্রতীকী ছবি
রাজ্যের প্রথম কোনও বাসিন্দা মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। এর আগে বিহার ও অসমে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত তিনজন রোগী পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়েছেন। মঙ্গলবারই সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তিনি ছাড়া পেয়ে বাড়ি গিয়েছেন। সাঁতরাগাছির বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে আনন্দবাজার ডিজিটাল।
সাঁতরাগাছির বাসিন্দা ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর ১১ এপ্রিল এমআর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। হাসপাতালেই একদিন খাবার খেতে গিয়ে তাঁর বাম দিকের চোয়ালে খাবারের টুকরো ঢুকে যায়। সেই থেকেই ওঁর দাঁতে ব্যথা শুরু হয়। চিকিৎসকদের জানালে পেন কিলার দেওয়া হয়। যদিও তাতে সমস্যা মেটেনি। দাঁতে ব্যথা চলতেই থাকে।
এদিকে এর দিন পাঁচেক পরই তিনি কোভিড মুক্ত হন। ২৬ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। কোভিড জয় করলেও দাঁত নিয়ে তাঁর সমস্যা বেড়েই চলে। এর পর টেলি-মিডিসিনের মাধ্যমে একজন দাঁতের চিকিৎসককে দেখান তিনি। চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিলেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। এর পর তিনি আরেকজন দাঁতের ডাক্তারকে দেখান। তিনি উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরিবারের দাবি, প্রাথমিক ভাবে দেখলেও কোভিড হয়েছিল বলে ওই ব্যক্তিকে ১৪ দিন পরে আসতে বলা হয় হাসপাতালের তরফে।
পরিস্থিতি দেখে পরিবারের লোকজন ১০ মে তাঁকে সার্দান অ্যাভিনিউয়ের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে মিউকরমাইকোসিস সন্দেহ করে সিটি স্ক্যান করা হয়। তখন তাঁর সুগারের মাত্রা ৩৫০। চিকিৎসক স্বাগত চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয়। ওই চিকিৎসক জানিয়েছে, ১৭ মে থেকে মিউকরমাইকোসিসের ওষুধ অ্যাম্ফোটেরেসিন-বি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় ওই ব্যক্তিকে। ১৮ তারিখ বায়পসি করার সময় চোয়ালের একটা অংশ বাইরে দিকে বেরিয়ে আসে। আবারও ২৪ মে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেই সময় বাঁ দিকের চোয়াল থেকে চোখের তলা পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়। ডান দিকের চোয়ালের নীচের অংশও বাদ দেওয়া হয় সংক্রমণ রুখতে। তার পর ভাস্কর গুপ্ত ও কৌশিক চক্রবর্তী আরও দুই চিকিৎসক যোগ দেন স্বাগত চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। স্বাগত চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তকে ২১ দিন পর্যন্ত অ্যাম্ফোটেরেসিন-বি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর ১৯ দিনের মাথায় আবারও সিটি স্ক্যান করা হয়। রিপোর্ট এলে দেখা যায়, সংক্রমণ আর ছড়ায়নি। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মিউকরমাইকোসিস। তিনি সুস্থ হয়ে যাওয়াতে মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’ হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, দেড়মাস ওঁর ওষুধ চলবে। ৩০ দিন পর সিটি স্ক্যান করা হবে আরও ভাল ভাবে জানার জন্য যে সংক্রমণ আবারও ছড়িয়েছে কি না।
সুস্থ হওয়ার পর ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘ভয়-আনন্দ দু’টোই হচ্ছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে ভাল লাগছে। তবে ভয় লাগছে। যতক্ষণ না নিশ্চিত হচ্ছি যে আর কখনও হবে না, তত দিন এই ভয়টা থাকবেই।’’ এ ছাড়াও তিনি মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসার খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসা খরচ কম হলে সাধারণ মানুষের সুবিধা হয়। ওষুধের দামও যাতে কমানো হয় সেটা দেখা দরকার।’’
(‘মিউকরমাইকোসিস’ আদৌ ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নয়। বস্তুত, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বলে কোনও রোগ নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
অথচ ঘটনাচক্রে, রোগটি এই নামেই আমজনতার কাছে অনেক বেশি পরিচিত। সেই কারণেই আনন্দবাজার ডিজিটাল সাধারণ ভাবে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নামটি ‘মিউকরমাইকোসিস’-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। অজ্ঞানতাবশত নয়।)