নবজাতক: সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মা এবং সদ্যোজাতেরা। নিজস্ব চিত্র
আলিপুরের আঁতুড়ঘর থেকে মিলল সুখবর। দীর্ঘ ২৭ বছর পরে।
আলিপুর চিড়িয়াখানার সিংহ পরিবারে আগমন হয়েছে তিন নতুন সদস্যের। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত সোমবার জানিয়েছেন, শুক্রবার তিনটি শাবক প্রসব করেছে ভারতীয় সিংহী শ্রুতি। আপাতত সুস্থই রয়েছে বিশ্বাস ও শ্রুতির ওই তিন সন্তান। তাদের মধ্যে একটি পুরুষ। তবে বাকি দুই ছানার কাছে যেতে না পারায় এখনও পর্যন্ত তাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি।
রাজ্য জু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব এ দিন জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে ওই তিন সন্তানের জন্ম দেয় শ্রুতি। এই কয়েক দিন তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। ১৯৯২ সালের পরে এই প্রথম সিংহশাবক সুস্থ ভাবে জন্মাল। প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে শ্রুতির একটি শাবক জন্মেছিল। কিন্তু জন্ম থেকেই দুর্বল সেই ছানাটিকে বাঁচানো যায়নি। শ্রুতি নিজেও তার দুধ খাইয়ে সেই ছানাটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। চিড়িয়াখানার কর্মীরা দুর্বল সেই শাবককে কৃত্রিম দুধ খাইয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
আলিপুর চিড়িয়াখানায় এক সময় সিংহ পরিবারে সদস্য-সংখ্যা অনেকটাই বেশি ছিল। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, ১৯৯২ সালে জন্মানো সেই সিংহদের একটিও বর্তমানে আর চিড়িয়াখানায় নেই। কয়েক বছর আগেও যে কয়েকটি সিংহ-সিংহী ছিল, তাদের বয়স হয়ে যাওয়ায় প্রজনন করানো যায়নি। ওই সিংহ-সিংহীদের চিড়িয়াখানার হাসপাতালের ‘বৃদ্ধাবাসে’ পাঠিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। তবে তারা কেউ আর এখন বেঁচে নেই।
সিংহ পরিবারের পুরনো সদস্যদের মধ্যে দুর্গা নামে একটি সিংহী বাদে বাকিরা সকলেই ছিল ভারতীয় ও আফ্রিকান সিংহের সংকর। খাঁটি ভারতীয় সিংহ ছিল না বললেই চলে। সেই অভাব পূরণ করতেই ২০১৭ সালে হায়দরাবাদের চিড়িয়াখানা থেকে কলকাতায় আনা হয় বছর বারোর বিশ্বাস এবং বছর ছয়েকের শ্রুতিকে। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে শংসাপত্রও নেওয়া হয়। ওই শংসাপত্র অনুযায়ী, বিশ্বাস ও শ্রুতির শরীরে বইছে খাঁটি ভারতীয় সিংহের রক্ত। ফলে সদ্যোজাত তিন সিংহশাবকও খাঁটি ভারতীয়।
চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, শ্রুতির আগের সন্তানটি না-বাঁচায় এ বারে অতি সাবধানী হয়েছিলেন চিড়িয়াখানার কর্তারা। শ্রুতির প্রসব তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন অর্ণব মাজি, শান্তনু সোম ও চয়ন ভট্টাচার্য নামে তিন পশু-চিকিৎসক এবং দুই অভিজ্ঞ কিপার শিউপূজন রাম ও সুভাষ দে। চিড়িয়াখানার বর্ধমান হাউজ়ের ‘নাইট শেল্টারে’ প্রসব হয়। মা ও তিন সন্তান আপাতত সেখানেই রয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার এক কর্তা জানিয়েছেন, মা-সন্তানের ‘আঁতুড়ঘরে’ বসানো সিসিটিভির মাধ্যমেই আপাতত তাদের উপরে নজর রাখা চলছে। অধিকর্তা আশিসবাবুও নিজের ঘরে বসে সিসিটিভির মাধ্যমে নজর রেখেছেন নতুন সদস্যদের উপরে। এর মধ্যে রবিবার সিসিটিভিতেই ধরা পড়ে যে, একটি সিংহশাবক যে মায়ের দুধ খাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আলাদা করে সরিয়ে এনে বোতলে করে দুধ খাওয়ানো হয়। তবে ওই শাবকের শারীরিক কোনও সমস্যা ধরা পড়েনি। আরও কয়েক দিন টানা নজরদারির পরে তবেই আঁতুড়ঘর ছেড়ে নিজেদের ‘ঘরে’ ফিরতে পারে মা ও সন্তানেরা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।