যত্রতত্র: সমাবেশস্থলের আশপাশের রাস্তায় পড়ে রয়েছে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের আবর্জনা। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র।
শব্দবিধি থেকে পার্কিং-বিধি লঙ্ঘন, বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করেই থার্মোকলের থালা-গ্লাসের অবাধ ব্যবহার— একুশের সমাবেশে এমন একাধিক নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠল। পরিবেশকর্মীদেরঅভিযোগ, প্রতি বারের মতোই যাবতীয় পরিবেশ-বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শাসক দল এ দিন সভা করেছে। যদিও শাসক দলের তরফে এই অভিযোগের সত্যতা পুরোপুরি স্বীকার করা হয়নি।
অতীতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংক্রান্ত এক মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল, দূষণ থেকে বাঁচাতে ওই স্মৃতিসৌধের নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে কোনও যানবাহন দাঁড় করানো যাবে না। কিন্তু এ দিন সেই নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে দাবি পরিবেশকর্মীদের। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, কলকাতা হাই কোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এক পক্ষ সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিল। কিন্তু শীর্ষ আদালতও এ ক্ষেত্রে হাই কোর্টের রায়ই বহাল রাখে। তাঁর কথায়, ‘‘সেখানে এ দিন যাবতীয় নিয়ম ভেঙে বেআইনি ভাবে গাড়ি পার্কিং করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ময়দান নোংরা করা তো আছেই।’’ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বলেছেন, ‘‘আজকের নিয়মভঙ্গের বিষয়টা বলতে পারব না। তবে গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে নিয়ম তো ভাঙা হয়ই। বিধি ভেঙে বাস, গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।’’
যদিও রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘এত বড় সভা করলে একটু-আধটু সমস্যা হবেই। তবে তার মধ্যেও পরিবেশ-বিধি নিয়ে সতর্ক ছিলাম। যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি। সভা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরকর্মীরা ময়দান সাফাইয়ে নেমে পড়েছেন।’’
যদিও সরকারের এই দাবি নস্যাৎ করছেন পরিবেশকর্মীরা। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর মতে, ‘‘সাউন্ড লিমিটর লাগানো ছাড়াই চতুর্দিকে তারস্বরে মাইক বেজেছে। কোনও নিয়মই মানা হয়নি।’’ পরিবেশকর্মীরা আরও জানাচ্ছেন, ১ জুলাই থেকে নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য সরকার এককালীন ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পাশাপাশি থার্মোকলের থালা-বাটিও নিষিদ্ধ করেছে। অথচ শাসক দলের সভাতেই সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার ঘটনা নজরে পড়েছে। এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘এটা তো সরকারি মদতে রাজনৈতিক সভা, তাই নিয়মকানুন সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। না হলে এমন ঘটনা ঘটে কী ভাবে?’’
পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর বক্তব্য, এ দিন শাসক দলের কাছে প্লাস্টিক, থার্মোকল বর্জন করে দৃষ্টান্ত তৈরির সুযোগ ছিল। কিন্তু তা করা হল না! সংগঠনের সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘‘এ দিকে রাজ্যের পরিবেশ দফতর, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পরিবেশ-বিধি মানা হচ্ছে কি না, তার উপরে নজর রাখে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই যেখানে পরিবেশ-বিধি ভাঙা হয়, সেখানে নিয়ম মানবে কে?’’