লেলিহান: আগুনের গ্রাসে বাজার। সোমবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
গভীর রাতের আগুনে ছাই হয়ে গেল বারুইপুরের কাছারি বাজার।
দমকল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত দুটো নাগাদ প্রথমে কাছারি বাজারের কাপড়পট্টিতে আগুন লাগে। নিমেষে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাজারে। প্রায় দেড়শো দোকান পুড়ে গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করছেন ব্যবসায়ীরা।
ওই রাতে কাপড়পট্টি থেকে আগুনের শিখা বেরোতে দেখে স্থানীয়েরাই বারুইপুর থানায় খবর দেন। সেখান থেকে খবর যায় দমকলে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে ফুলতলা থেকে দমকলের গাড়ি এসেছে প্রায় ঘণ্টাখানেক দেরিতে। রাতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও আগুনের ভয়াবহতা এতটুকু কম ছিল না। একে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা দোকান, তার উপরে সেগুলি অতিদাহ্য বস্তুতে ঠাসা থাকায় পরপর দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কাপড়ের দোকান থেকে তা ছড়িয়ে যায় আশপাশের মুদিখানা ও মনোহারী দ্রব্যের দোকানে। প্রথমে ফুলতলা থেকে আসা দু’টি দমকলের ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে হাত লাগালেও তা বিফলে যায়। দমকলের গাড়িতে থাকা জল ফুরিয়ে যাওয়ায় প্রথম ধাপেই বিপত্তি ঘটে। কাছারি বাজারের আশপাশে কোনও পুকুর না-থাকায় জলের অভাবে সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় আগুন নেভানোর কাজ। তবে দমকল মেনে নিয়েছে, খুব বৃষ্টি হওয়ায় তাদের আসতে খানিকটা সময় লেগেছে।
শেষে বেহালা ও পাটুলি এলাকা থেকে একে একে আসতে শুরু করে দমকলের ইঞ্জিন। বারুইপুর থানার সাব-মার্সিব্ল পাম্প থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন দমকলকর্মীরা। জল নেওয়া হয় একটু দূরের পুকুরগুলি থেকেও। মঙ্গলবার সকাল সাতটা নাগাদ দমকলের ১১টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও কাছারি বাজারের নানা জায়গায় ধিকিধিকি আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে। আগুন পুরোপুরি আয়ত্তে আসতে বেলা ১১টা বেজে যায়।
কী ভাবে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল, তা স্পষ্ট নয় দমকল ও পুলিশের আধিকারিকদের কাছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, গভীর রাতে বৃষ্টির সময়ে অনবরত বাজ পড়ছিল। সেটাও আগুন লাগার একটি কারণ হতে পারে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ দিন সকালে কাছারি বাজারে গিয়ে দেখা গেল, তখনও বিভিন্ন জায়গা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আধপোড়া দোকানগুলির শাটার ভেঙে দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। এক দমকলকর্মী জানান, প্রতিটি দোকানে মজুত ছিল অতিদাহ্য কাপড়। সেই কারণে যে কোনও সময়ে আবার আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে। তাই শাটার ভেঙে সব দোকানের আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন বারুইপুর পশ্চিম বিধানসভার বিধায়ক তথা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা চলছিল। লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে সম্প্রতি দোকান খুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে এত বড় বিপর্যয়। কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’
এ দিন বেলায় ঘটনাস্থলে আসেন বিরোধী নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে নাশকতা এবং প্রোমোটারি চক্র আছে বলে অভিযোগ তোলেন। যা শুনে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। এ দিন তাঁরা সুজনবাবুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ এসে দু’পক্ষকে সরায়। এর প্রেক্ষিতে বিমানবাবু বলেন ‘‘অনভিপ্রেত ঘটনা। তবে উনি যা বলেছেন তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ মেজাজ হারিয়ে ফেলেছেন।’’
বাজার পুড়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন প্রায় দেড়শো থেকে দু’শো ব্যবসায়ী। তাঁরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ দোকানের অগ্নি-বিমা ছিল না। ফলে রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণ ছাড়া তাঁদের পক্ষে ফের ব্যবসা শুরু করা সম্ভব নয়।