সহাস্য: মঙ্গলবার বইমেলার উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রুশ রাষ্ট্রদূত কুদাশেভ নিকোলাই রিশাতোভিচ। ছবি: সুমন বল্লভ
গত বইমেলা পর্যন্ত বই লেখার ইনিংসে তাঁর ব্যাটে রান ছিল ৮৮। কথা দিয়েছিলেন, এ বছর ‘সেঞ্চুরি’ করে ফেলবেন।
কথা রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধনের প্রাক্ মুহূর্তেই তা জানিয়ে দিলেন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর লেখার পাণ্ডুলিপির জন্য সোমবার রাত দশটা পর্যন্ত প্রতীক্ষায় ছিলেন প্রকাশকেরা। রাতারাতি তা-ও বই হয়ে গিয়েছে দেখে দৃশ্যতই খুশি মমতা।
গীতবিতানের মতোই বৃহদায়তন ৯৪৬টি কবিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবিতা বিতান’-সহ এ বারের সৃষ্টির ফসল ১৩টি বই। ছ’টি বাংলা, ছ’টি ইংরেজি, একটি উর্দু। মমতা বলেওছেন, ‘‘কেউ বাংলা, কেউ ইংরেজি, কেউ হিন্দি, তামিল, উর্দুতে লিখবেন, এটাই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। উর্দুতে লেখা বই বলে বা তামিলে লেখা বই বলে তাকে মেনে নেবেন না?’’ বাংলার সঙ্গে আরও ভাষা চর্চার পক্ষে সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী। ৪৪তম বইমেলার উদ্বোধক দেশের রুশ রাষ্ট্রদূত কুদাশেভ নিকোলাই রিশাতোভিচ-সহ রুশ অতিথিদের তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন রুশ ভাষায়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন বইয়ে মূল সুর হিসেবে ছায়া ফেলেছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। ‘নাগরিক’, ‘মানুষের জন্য উন্নয়নের লক্ষ্যে’ কিংবা উর্দু শায়েরির বই ‘হিম্মত’-এ সেই প্রসঙ্গ এসেছে। ‘হোয়াই উই আর সেয়িং নো সিএএ, নো এনআরসি, নো এনপিআর’ শিরোনামে ইংরেজিতে ছোট বইও লিখেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু তরুণীর, আহত বন্ধু
সরস্বতী পুজোর লম্বা ছুটি উপলক্ষে বইমেলায় পাঠক সমাগম বাড়তে পারে বলে আশাবাদী গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে। তবে সরস্বতী পুজোর আগে উদ্বোধনের তাড়নায় রুশ অতিথিরা কয়েক জন এ দিন থাকতে পারেননি। আজ, বুধবার থিম দেশ রাশিয়ার প্যাভিলিয়নের উদ্বোধনে তাঁরা থাকবেন। রুশ রাষ্ট্রদূত এ দিন বলছিলেন রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পুরনো বৌদ্ধিক সম্পর্কের কথা। রাজীব গাঁধীর আমলে আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে রাশিয়া ভ্রমণের স্মৃতিচারণ করেন মমতা। বইমেলার সঙ্গে তাঁর আবেগের বন্ধনের কথা বারবার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, কী ভাবে দ্বিজেনদা (দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়), মহাশ্বেতাদেবী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পী-সাহিত্যিকদের কথা তাঁর মনে পড়ছে! অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রাপ্ত লেখক-গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীকে বইমেলার বিবর্তন নিয়ে লিখতেও অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ দিনভর, অভিযান দু’ঘণ্টার
এই ইন্টারনেটের যুগেও নিজের লেখা এবং মনের ভাব প্রকাশের আনন্দ তাঁর কাছে একেবারে অনন্য, বলতে ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। ২০২০-র বইমেলায় দাঁড়িয়ে সব মিলিয়ে মমতার বইয়ের ইনিংস এখন ১০১ নট আউট।