চলতি মার্চ মাসের ২ তারিখেই নওশাদ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ফাইল চিত্র।
ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি নিল কলকাতা পুলিশ। সোমবার বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শেষদিন কলকাতা পুলিশের তরফে স্পিকারের দফতরে ওই সংক্রান্ত অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, ওই দিনই কলকাতা পুলিশকে ওই বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
চলতি মার্চ মাসের ২ তারিখেই নওশাদ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ৪২ দিন কারাবাসের পর মুক্তি পেয়ে ফুরফুরা শরিফের এই পিরজ়াদা নিয়মিত বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। সেই অধিবেশনের শেষ দিনেই কলকাতা পুলিশকে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠনের অনুমতি দেওয়া হল স্পিকারের তরফে। নিয়ম বলছে, বিধানসভা, লোকসভা বা রাজ্যসভার কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে গেলে বা চার্জ গঠন করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কক্ষের স্পিকার বা চেয়ারম্যানের অনুমতি প্রয়োজন। সেই বিধি মেনেই কলকাতা পুলিশ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের থেকে ওই অনুমতি গ্রহণ করেছে।
ঘটনাচক্রে, কলকাতা পুলিশ যে দিন নওশাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে স্পিকারের অনুমতি চাইল, সে দিনই বিধানসভায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করেছে শাসক তৃণমূল। ওই প্রস্তাব নিয়ে বক্তৃতা শেষে সেই প্রস্তাব ধ্বনিভোটে পাশ হওয়ার পরেই স্পিকার বলেন, ‘‘বিধায়কদের সুরক্ষার বিষয়ে অনেকেই আমার কাছে আবেদন করেন। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরও। তাই আমি আশা করব, এই সভার কোনও সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আগে কেন্দ্রীয় এজেন্সি যেন বিষয়টি স্পিকারের নজরে আনে।’’
২০২১ সালে ২ মে ভোটের ফলঘোষণার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বার সরকার গঠনের জনাদেশ পেয়েছিলেন। ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন তিনি। ৯ মে শপথগ্রহণ করে তাঁর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। আর ১৭ মে নারদাকাণ্ডে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অধুনাপ্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র এবং বেহালা পূর্বের প্রাক্তন বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। তাঁকে কিছু না জানিয়ে বিধায়কদের গ্রেফতার করা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন স্পিকার। পরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এবং ইডির আধিকারিকদের বিধানসভায় তাঁর সমক্ষে হাজির হতে চিঠি দিয়েছিলেন বিমান। এর পর দুই কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে স্পিকারের দফতরের চিঠি চালাচালি হলেও সিবিআই বা ইডির কোনও আধিকারিক স্পিকারের সামনে হাজির হননি।
গত ২১ জানুয়ারি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ)-এর প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে ধর্মতলায় একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিল নওশাদের দল। সেই সমাবেশ কেন্দ্র করে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আইএসএফ কর্মী সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিনই কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন নওশাদ-সহ আইএসএফের ৮৮ জন কর্মী। দীর্ঘ দিন নওশাদকে জেলে রাখার ঘটনায় আলোড়ন পড়ে। তাঁর মুক্তির দাবিতে বিরোধী বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস তো বটেই, সুর মিলিয়েছিলও বিজেপিও। এমনকি, ‘আইনজীবী’ হিসেবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্পিকার বিমানও। এ বার সেই স্পিকারই ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের অনুমতি দিলেন কলকাতা পুলিশকে।