রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
ভারতীয় সংবিধানের রক্ষাকবচ পান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা শ্লীলতাহানির অভিযোগে কী করণীয়? সে বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় রাতেই জানিয়েছেন, তাঁরা আইন এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন। তদন্তপ্রক্রিয়া কী ভাবে এগোবে, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার রাতে রাজ্যপাল বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজভবন চত্বরে পুলিশের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছেন রাজভবনের এক অস্থায়ী কর্মী। মহিলা রাতে হেয়ার স্ট্রিট থানায় গিয়েছিলেন। সেখানে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান তিনি। তাঁর সঙ্গে কবে কখন কী হয়েছে, তা বিস্তারিত ভাবে পুলিশকে বলেছেন। এর পরেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা বলেন, ‘‘বিকেল ৫টা নাগাদ রাজভবনের আউটপোস্টে একটি অভিযোগ আসে। এক মহিলা, যিনি রাজভবনের কর্মী, শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগটি রাজভবনের আউটপোস্টে জমা পড়ে। সেটিকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় ফরোয়ার্ড করা হয়। আমরা অভিযোগটি নথিভুক্ত করেছি এবং তদন্ত শুরু করেছি।’’ ইন্দিরা আরও বলেন, ‘‘অভিযোগটি রয়েছে মাননীয় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারিণী থানায় এসে সবিস্তারে অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি সংবেদনশীল। আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী কী কী পদক্ষেপ করা যায়, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সেই আলোচনাও করা হচ্ছে।’’
রাতে ডিসি (সেন্ট্রাল) যখন পুলিশের এই অবস্থানের কথা জানাচ্ছেন, প্রায় একই সময়ে রাজভবন থেকে জারি করা হয় একটি বিবৃতি। রাজ্যপাল তাতে জানান, রাজভবন চত্বরে পুলিশকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ভোটের বাজারে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের খুশি করার জন্য অবৈধ, অননুমোদিত তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যেতে ছদ্মবেশী পুলিশকে বরদাস্ত করবেন না তিনি। একই সঙ্গে রাজ্যপালের সম্মানহানি এবং অসাংবিধানিক বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগে রাজভবনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকেও। রাজ্যপাল জানান, চন্দ্রিমা কলকাতা, দার্জিলিং এবং ব্যারাকপুরের রাজভবনে ঢুকতে পারবেন না। তিনি কোনও অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে থাকবেন না রাজ্যপাল। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের বিষয়েও অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ ওঠার পর বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় বলেছিলেন, ‘‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬১ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি পদক্ষেপ করা যায় না। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে রাজ্যপালের। তবে জমিজমা সংক্রান্ত কোনও দেওয়ানি মামলা করা যেতেই পারে। এই ধরনের অভিযোগ অতীতে উঠেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। ফলে আদালতে বিষয়টি গেলে কী হবে, তা আমার জানা নেই। সুপ্রিম কোর্ট একে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবে, তা তো বোঝা সম্ভব নয়।’’
কলকাতা পুলিশের তরফেও তাই আপাতত আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশের কী করণীয়, তা জানতে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলছে লালবাজার।