গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানি’র অভিযোগ তুললেন এক মহিলা। পুলিশের কাছে তিনি নিজেকে রাজভবনের অস্থায়ী কর্মচারী বলে দাবি করেন। ওই মহিলা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানান। যদিও এ নিয়ে পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। রাজভবনের তরফেও এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি।
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাত ৮টা ৩৫ মিনিট নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামার কথা তাঁর। এর পর রাত ৯টা ১০ মিনিট নাগাদ তাঁর রাজভবনে পৌঁছনোর কথা। সেখানেই রাত্রিবাস করার কথা মোদীর। তার আগে রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলেন ওই মহিলা।
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগকারিণী হেয়ার স্ট্রিট থানায় এসেছেন। লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারাও রয়েছেন থানায়। রয়েছেন ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।
এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় বলেন, ‘‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬১ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি পদক্ষেপ করা যায় না। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে রাজ্যপালের। তবে জমিজমা সংক্রান্ত কোনও দেওয়ানি মামলা করা যেতেই পারে।’’ তথাগত আরও বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযোগ অতীতে উঠেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। ফলে আদালতে বিষয়টি গেলে কী হবে, তা আমার জানা নেই। সুপ্রিম কোর্ট একে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবে, তা তো বোঝা সম্ভব নয়।’’
মহিলার অভিযোগ নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাগরিকা ঘোষ ইতিমধ্যেই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ভয়াবহ! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় যাচ্ছেন। রাজভবনে তাঁর রাত্রিবাস করার কথা। তার মধ্যেই এক মহিলা অভিযোগ করেছেন যে, তিনি আজ যখন রাজভবনে যান রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে, তখনই তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। অভিযোগকারিণীকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’
রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘একটি মেয়ের শ্লীহতাহানি হয়েছে। এটা তো ক্ষমাযোগ্য নয়। এটার তো বিহিত হওয়া দরকার। এতে কোনও চেয়ার (পদ) অভিযুক্তকে রক্ষাকবচ দিতে পারে না। সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে সবাই এত সরব ছিল। এখন সবাই কোথায়? আমরা তো কখনও বলিনি, সন্দেশখালিতে কিছু হয়নি। এখন যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়েও মানুষের মুখ খোলা দরকার। এ সবের জন্য বাংলার বদনাম হচ্ছে। বাইরে থেকে এসে বাংলাকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে।’’ শ্লীলতাহানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল বোসের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর।
তবে গোটা ঘটনার নেপথ্যে চক্রান্ত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তথাগত। তিনি বলেন, ‘‘আমি আনন্দ বোসকে অনেক দিন ধরে চিনি। দক্ষ আইএএস অফিসার ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগের পিছনে কোনও চক্রান্ত আছে বলেই মনে হয়। বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্দেশখালিকাণ্ড থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেও এ রকম অভিযোগ তোলা হয়ে থাকতে পারে।’’