Kolkata Police & TMC

সুশান্ত ও দুলালকাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসল কলকাতা পুলিশও! কাউন্সিলরদের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর

রাজ্যের দুই প্রান্তে তৃণমূল কাউন্সিলারদের উপর হামলার জেরে নতুন করে ১৭ দফা নির্দেশিকা জারি করেছেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৮
Share:

(বাঁ দিকে) সুশান্ত ঘোষ এবং দুলালচন্দ্র সরকার (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

কলকাতায় তৃণমূলের কাউন্সিলর এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। ইতিমধ্যে ওই নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। তাঁদের নিত্যনৈমিত্তিক কর্মসূচির পাশাপাশি, তাঁদের ঘিরে রাখেন কারা, বা কাদের সঙ্গে নেতা তথা কাউন্সিলরেরা ওঠাবসা করেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

গত বছর নভেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষের ওপর হামলার ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু সম্প্রতি মালদহে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন তৃণমূল নেতা দুলালচন্দ্র (বাবলা) সরকার। সেই ঘটনার পর শাসকদলের নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে আর কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ কলকাতা পুলিশ। তাই কলকাতা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করেছেন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। রাজ্যের দুই প্রান্তে তৃণমূল কাউন্সিলারদের উপর হামলার জেরে নতুন করে ১৭ দফা নির্দেশিকা জারি করেছেন তিনি।

পুলিশ কমিশনারের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘‘কলকাতার নেতা-মন্ত্রী থেকে বিধায়ক, সাংসদ-সহ কাউন্সিলারদের মতো জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে পর্যালোচনা করতে হবে। পর্যালোচনা শেষে পুলিশ কমিশনারকে রিপোর্ট দেবেন সংশ্লিষ্ট ডিসি এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ।’’ লিখিত ভাবে নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক এবং সাংসদদের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করা হলেও আসলে কলকাতার কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা নিয়েই পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগ বলে লালবাজার সূত্রে খবর। কমিশনারের এই নির্দেশিকা যাতে লঘু ভাবে না দেখা হয়, সেই বিষয়েও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে থানাগুলিকে।

Advertisement

শুক্রবার কলকাতার সব থানার ওসিদের পাশাপাশি ডিসিদের কাছে পুলিশ কমিশনারের এই ১৭ দফার লিখিত নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে। গত নভেম্বর মাসে তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্তকে তাঁর কসবার বাসভবনের সামনে গুলি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি। ঘটনার পর শাসকদলের অন্দরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২ জানুয়ারি মালদহে খুন হন তৃণমূল কাউন্সিলার তথা জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাবলা। তার পর নতুন করে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের এই নির্দেশিকা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন তৃণমূল কাউন্সিলরেরা।

নির্দেশিকায় নেতাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি পুলিশ কমিশনার সরকারি জমি দখল ঠেকাতে থানার ওসিদের সক্রিয় হতে বলেছেন। এর জন্য কলকাতা পুরসভার প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে থানার ওসিদের। পুলিশ বৈঠক করে জেনেছে, বহু ক্ষেত্রে শাসকদলের নেতা ও কাউন্সিলরদের উপর জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই আক্রোশ রয়েছে বহু প্রভাবশালীর। জমি সংক্রান্ত সমস্যার জেরে যাতে এলাকায় বড় ধরনের কোনও নাশকতার ঘটনা না ঘটে যায়, সেই বিষয়ে আগাম সতর্ক থাকছে কলকাতা পুলিশ।

তৃণমূল নেতা বাবলার খুনের ঘটনার এক দিন পরেই নবান্নে জরুরি বৈঠক করছিলেন রাজ‍্য পুলিশের শীর্ষকর্তারা। নবান্নে আয়োজিত এই বৈঠকে যোগদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনারদের। তাঁদের কাছ থেকে রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হয়েছিল। কারা এখন কী পর্যায়ের নিরাপত্তা পাচ্ছেন, কাদের নিরাপত্তা দেওয়া উচিত, কাদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে— তার বিস্তারিত তথ্য দ্রুততার সঙ্গে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বাবলা খুনের ঘটনার পর মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিলেন রাজ‍্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। তাই তড়িঘড়ি বৈঠক দেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। সেই বৈঠকের পরেই তৎপরতা শুরু হয়েছিল লালবাজারে। এ বার কলকাতার তৃণমূল কাউন্সিলর ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুলিশ।

তৃণমূলের এক প্রভাবশালী কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘যে ভাবে পর পর দু’টি ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তাতে আগামী দিনে জনপ্রতিনিধি এবং নেতাদের উপর হামলার প্রবণতা বাড়তে পারে। তাই এখন থেকে উদ্যোগী হতে হবে। আমরাও শুনেছি, কাউন্সিলরদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত হচ্ছে, তবে কার্যক্ষেত্রে তা কতটা নেতাদের কাজে লাগবে, তা যাচাই করার পরেই আমরা বলতে পারব।’’ তবে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ১৬ নম্বর বোরো কমিটির চেয়ারম্যান সুদীপ পোল্লে বলেন, ‘‘কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন নতুন করে উদ্যোগী হচ্ছে, এই বিষয়টি অবশ্যই একটি ভাল দিক। তবে কাউন্সিলরদের কাছে প্রতিনিয়ত প্রচুর মানুষ আসেন সরাসরি সাক্ষাৎ করতে। নিরাপত্তা দেওয়ার নামে কড়াকড়ির ক্ষেত্রে যেন তাঁদের উপর কোনও অত্যাচার না হয়, সেই বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে নজরে রাখতে হবে।’’ ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমার ওয়ার্ড কিংবা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। মুচিপাড়া থানা এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেষ্ট এবং সক্রিয়। আগামী দিনে যদি নিরাপত্তার কোনও সমস্যা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে আমি কলকাতা পুলিশেরই দ্বারস্থ হব। তবে নিরাপত্তার জন্য আমাদের কাছে যে ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হবে, আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে রাজি।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমি শুধু আমার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছি না, আমার ওয়ার্ডের সব মানুষ যাতে সমান নিরাপত্তা পান, সেই কারণেই আমি আমার ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি রাস্তায় ক্লোজ় সার্কিট ক্যামেরা লাগিয়েছি। নিরাপত্তার স্বার্থে সেই সব সিসিটিভি থেকে ফিড সরাসরি মুচিপাড়া থানায় চলে যাচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি আমাদেরও নিজেদের দায়িত্ব প্রসঙ্গে সচেতন থাকতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement