পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায় মানুষের ভিড়। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে বরণ করতে তৈরি কলকাতা। দিকে দিকে উৎসবের মেজাজ। আট থেকে আশি, প্রায় সকলেই সেই উৎসবে গা ভাসাতে প্রস্তুত। মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলকাতার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই একটা বড় অংশের গন্তব্য হবে পার্ক স্ট্রিট, ধর্মতলা চত্বর। উৎসবের শহরে যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করতে তৈরি কলকাতা পুলিশও। ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করেছে লালবাজার। দিকে দিকে নজরদারি বৃদ্ধি হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে চালানো হবে নজরদারি।
দিন দু’য়েক আগেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা উৎসবের মরসুমে শহরের নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। কী ভাবে কলকাতা পুলিশ শহরকে নিরাপত্তার বেড়াজালে মুড়ে ফেলা হচ্ছে, তা-ও জানান তিনি। বর্ষশেষে এবং বর্ষবরণে শহরের যেখানে যেখানে ভিড় হয়, যেমন চিড়িয়াখানা, জাদুঘর ইত্যাদি জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এই দু’দিন সাড়ে চার হাজার অতিরিক্ত পুলিশ থাকবে কলকাতার রাস্তায়। উৎসবের শহরে রাতে মত্ত চালকদের দৌরাত্ম্য এবং জায়গায় জায়গায় নানা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। সে দিকে এ বার কড়া নজর রাখা হবে বলে জানান পুলিশ কমিশনার। তিনি আরও জানান, মত্ত অবস্থায় বা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালালে, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মনোজ। শুধু তা-ই নয়, শ্লীলতাহানি বা মহিলাদের সঙ্গে অভব্য ব্যবহারের অভিযোগের উপরও নজর থাকবে। পাশাপাশি, বয়স্ক এবং শিশুদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকে বিশেষ নজর দেবে পুলিশ।
প্রতি বছর বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে বিপুল জনসমাগম হয় পার্ক স্ট্রিটে। মধ্যরাত পর্যন্ত কমবয়সিদের ভিড়ে জমজমাট থাকে পার্ক স্ট্রিট এবং সংলগ্ন রাস্তাগুলি। তাই এই এলাকার উপর বেশি নজর দেওয়া হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন মনোজ। এই এলাকায় সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। অপরাধদমন শাখার দলও থাকবে নিরাপত্তার দায়িত্বে। জানা গিয়েছে, গোটা পার্ক স্ট্রিট এলাকাকে চার থেকে ছ’টি জ়োনে ভাগ করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিকেরা। এ ছাড়াও, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার পুলিশও থাকছে। দু’জন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী সামলাবে পার্ক স্ট্রিট এবং সংলগ্ন রাস্তাগুলির নিরাপত্তা। সেই দলে থাকছেন ১২ জন ডেপুটি কমিশনার, ২৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং ৭০ জন ইনস্পেক্টর। পাশাপাশি, ১১টি ‘ওয়াচ টাওয়ার’ থেকে পুলিশ গোটা এলাকার উপর নজর রাখবে। ১০টি পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র গড়া হয়েছে। কুইক রেসপন্স দলও থাকছে পার্ক স্ট্রিট চত্বরে।
গত বছর বর্ষবরণের রাতে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য দেখা গিয়েছিল শহরে। এ বার যাতে সেই দৌরাত্ম্যে প্রাণ অতিষ্ঠ হওয়ার পরিস্থিতি না হয়, তা-ও নজর রাখবে পুলিশ। শহরে ৫০টির বেশি জায়গায় স্পেশ্যাল নাকা চেকিংয়ের বন্দোবস্ত থাকবে।
অন্য দিকে, মা উড়ালপুলে বাইক আরোহীদের জন্য ২৪ ঘণ্টা ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আগে রাতে মা উড়ালপুলে বাইক উঠতে দেওয়া হত না। তবে মা উড়ালপুলে উঠতে দিলেও বাইক আরোহীদের সতর্ক করা হয়েছে। গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বাইক চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথা হলেই কড়া পদক্ষেপ, হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে কলকাতা পুলিশ।
৩১ ডিসেম্বর যাত্রীদের সুবিধার্থে কলকাতা মেট্রো বিশেষ ট্রেন চালাবে বলে জানিয়েছে। বর্ষশেষের রাতে ব্লু (নীল) লাইনে চলবে অতিরিক্ত তিনজোড়া মেট্রো। অতিরিক্ত তিন মেট্রোর প্রথমটি দক্ষিণেশ্বর স্টেশন থেকে ছাড়বে রাত ৯টা ৪৮ মিনিটে। কবি সুভাষ থেকে ছাড়বে ৯টা ৫৫ মিনিটে। দ্বিতীয় বিশেষ মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যাবে দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে রাত ১০টা ৩ মিনিটে, আর কবি সুভাষ স্টেশনে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। দক্ষিণেশ্বর এবং কবি সুভাষে তৃতীয় তথা শেষ বিশেষ মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যাবে যথাক্রমে ১০টা ১৮ এবং ১০টা ২৫ মিনিটে। রাতের বিশেষ মেট্রো অন্য দিনের মতো ওই দিনেও দমদম এবং কবি সুভাষ স্টেশন থেকে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ছাড়বে।