কয়েকজন চিকিৎসকের সফল চেষ্টায় রক্তপাত বন্ধ হয়ে চালু হয় শ্বাস-প্রশ্বাস। — প্রতীকী চিত্র।
কেটে গিয়েছিল বৃদ্ধের গলার নলি। রক্তাক্ত অবস্থায় দ্রুত মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। চিকিৎসকরা দেখেন সম্পূর্ণ কেটে গিয়েছে শ্বাসনালি। সঙ্গে কেটে গিয়েছে গলার একাধিক ধমনীও। মৃতপ্রায় বৃদ্ধকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। মহকুমা হাসপাতালের সীমিত পরিকাঠামোয় জরুরি বিভাগেই শুরু হয় কৃত্রিম শ্বাসনালি তৈরির বিরল অস্ত্রোপচার। কয়েকজন চিকিৎসকের সফল চেষ্টায় রক্তপাত বন্ধ হয়ে চালু হয় শ্বাস-প্রশ্বাস। অবশ্য প্রয়োজন ছিল উন্নত চিকিৎসার। ‘রেফার’ করা হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। মেডিক্যালেই মৃত্যু হল ওই বৃদ্ধের!
বুধবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃত্যু হয় খড়্গপুর গ্রামীণের বেনাপুর সংলগ্ন কাশীজোড়া গ্রামের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের। মৃতের নাম দুর্গাপদ কর (৬৩)। বাড়িতেই ধারালো অস্ত্রে গলার নলি পুরোপুরি কেটে গিয়েছিল ওই বৃদ্ধের। পরিবারের দাবি, শারীরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আত্মঘাতী হতে নিজেই গলার নলি কেটে ফেলেছিলেন ওই বৃদ্ধ। তবে ওই ঘটনার পরে রাতে রক্তাক্ত অবস্থায় আসা বৃদ্ধের প্রাথমিক চিকিৎসায় খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকরা যে ভাবে অস্ত্রোপচার করেন তা বিরল।
বিষয়টিকে তাই বড় করে দেখছেন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, মৃতপ্রায় অবস্থায় বৃদ্ধকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছিলেন পরিজনেরা। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মনীষা বিশ্বাস গলার নলি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বুঝেই দ্রুত ডাকেন হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ও নাক-কান-গলার শল্য চিকিৎসক অমিতাভ মাইতিকে। এর পরে ওই দুই চিকিৎসক শুরু করেন ওই বৃদ্ধকে বাঁচানোর লড়াই। সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন অন্য এক চিকিৎসক বাপন কবিরাজও। তবে বৃদ্ধের শ্বাসনালি কেটে ঝুলতে থাকায় অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি ছিল না। মহকুমা হাসপাতালে যেটুকু পরিকাঠামো রয়েছে সেই অনুযায়ী অপারেশন থিয়েটার থেকে কিছু সরঞ্জাম এনে জরুরি বিভাগের শয্যাতেই শুরু হয় অস্ত্রোপচার। ঘন্টা খানেকের চেষ্টায় সফল অস্ত্রোপচারে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৮শতাংশ হলে স্থিতিশীল অবস্থায় উন্নত চিকিৎসায় মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করেন খড়্গপুরের চিকিৎসকরা।
তবে মেদিনীপুরে চিকিৎসার পরে রাতেই মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের। তাঁর মেয়ে বীথি কর বলেন, “বাবার দেহের একাংশ অনেক বছর অসাড় ছিল। সঙ্গে কোমর ভাঙা, অ্যাজমা-সহ নানা রোগে ভুগছিলেন বাবা। সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরেই বাবা আত্মহত্যার চেষ্টায় গলা কেটেছেন। আমরা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে সত্যিই চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেছেন। একটা স্থিতিশীল অবস্থায় বাবাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসা হলেও বাবাকে শেষমেশ বাঁচাতে পারলাম না।”
শল্য চিকিৎসক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “মহকুমা হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচার অসম্ভব। তার পরেও ওই বৃদ্ধকে বাঁচাতে আমাদের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ লড়াই চালিয়েছেন। আমরা সকলে তাঁকে সহযোগিতা করেছি।” নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ অমিতাভ মাইতি বলেন, “কৃত্রিম শ্বাসনালি তৈরি করতে এড্রোট্র্যাকিয়াল টিউব বসিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে সেলাই করে স্থিতিশীল অবস্থায় রেফার করি।”
সুপার ধীমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বৃদ্ধকে অপারেশন থিয়েটারে পাঠানো সম্ভব ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা সবকিছুই হয়েছে জরুরি বিভাগে। আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকরা ৯৮শতাংশ অক্সিজেনের মাত্রা-সহ স্থিতিশীল অবস্থায় বৃদ্ধকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করেছিলেন।”