করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে এবার বন্ধ হতে চলেছে দক্ষিণেশ্বর ও তারাপীঠ মন্দিরের ফটক।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে বন্ধ হতে চলেছে একে একে ৪টি বড় মন্দিরের ফটক। তারকেশ্বর মন্দির আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ বার সেই পথে হেঁটে কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর ও তারাপীঠের দেবালয়ের সদর দরজা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। শনিবার অঘোষিত ভাবে লকডাউন জারি করে দিয়েছে নবান্ন। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন আগামী ১৫ দিনের বিধিনিষেধের তালিকা। যদিও, সেই তালিকা নেই ধর্মীয়স্থানগুলির উল্লেখ্য। কিন্তু সরকারের প্রকাশিত নির্দেশে বলা হয়েছে, মে মাসের শেষ ১৫ দিনে করা যাবে না কোনও রকম ধর্মীয় জমায়েত। তাই সরকার পক্ষের সতর্কবার্তা হিসেবেই রাজ্যের সব প্রসিদ্ধ ধর্মীয়স্থানগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্দির কমিটিগুলি। কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী দেখে তারেকশ্বর মন্দির কমিটি মন্দির বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। চলতি মাসের ৮ তারিখেই বৈঠকে বসেন মন্দির কমিটির শীর্ষ কর্তারা। ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই ৯ মে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তারকেশ্বরের মন্দির। ভক্তদের জন্য তারকনাথের দর্শন কবে থেকে সম্ভব হবে, তা নিয়ে কোনও যুৎসই উত্তর দিতে পারেনি মন্দির কমিটি।
শনিবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেছিল কালীঘাট টেম্পল কমিটি। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আপাতত সরকারি নির্দেশ মেনে ১৫ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে মন্দির। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কালীঘাট মন্দিরের কপাট খোলার সিদ্ধান্ত নেবে কমিটি। যদিও, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভি়ড় হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন মন্দিরের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা। শুক্রবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অক্ষয় তৃতীয়া থাকলেও পরিচিত ভিড়ের দৃশ্য উধাও ছিল কালীঘাটে। তাই সব দিক বিবেচনা করেই মন্দির বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কালিঘাট টেম্পল কমিটির সহসভাপতি বিদ্যুৎ হালদার বলেন, ‘‘আমরা মন্দির কমিটি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মন্দির বন্ধ রাখা হবে।
সাধারণ মানুষের জন্য মন্দিরের দরজা বন্ধই থাকবে। কিন্তু মন্দিরে দরজা বন্ধ থাকলেও নিত্যপুজোয় কোনও খামতি থাকবে না।’’ দক্ষিণেশ্বর মন্দির কমিটি অবশ্য এখনই মন্দির বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করলেও, মন্দিরে আমজনতার প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে। মন্দিরের ভিতর যাবতীয় রীতিনীতি মেনে পুজো হলেও, আপাতত দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেই জানিয়েছেন দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দিরের অছি কুশল চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘সংক্রমণের কারণেই আমরা দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করব।’’
সরকারি সিদ্ধান্ত মেনেই মন্দির বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীরভুমের তারাপীঠ সেবায়েত সংঘ। শনিবার দুপুরে সরকারি ঘোষণা জানা মাত্রই সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় মন্দির ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা সরকারি নির্দেশ মেনে চলার পক্ষপাতী। কারণ প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েই আমাদের চলতে হয়। সাধারণ মানুষের ভালর জন্যই যখন সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন আমাদেরও এই সিদ্ধান্ত মেনে চলা উচিত। তাই আপাতত আগামী ১৫ দিন তারাপীঠের মন্দিরের দরজা ভক্তদের জন্য বন্ধ থাকবে।’’ প্রসঙ্গত, করোনা প্রকোপের প্রথম ঢেউয়ের সময়ও দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল দেবালয়গুলি। কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়েও সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হল।