আত্মবিশ্বাসের অভাব। ইডির সহকারী ডিরেক্টর মিথিলেশ কুমার মিশ্রকে সরিয়ে দিয়ে এমন মন্তব্যই করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। তার নির্দেশ, রাজ্যের কোনও মামলায় থাকতে পারবেন না মিথিলেশ। পাশাপাশি ইডির ডিরেক্টরকে বিচারপতির নির্দেশ, দ্রুত নতুন অফিসার নিয়োগ করা হোক।
আগামী ৩ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেছে ইডি। অভিষেক যদিও বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি ওই দিন দিল্লিতে থাকবেন। শুক্রবার বিচারপতি সিংহ জানিয়েছেন, ৩ অক্টোবরের তদন্ত বা অনুসন্ধান যেন কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তদন্তের স্বার্থে যে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে ইডি। তার পরেই বিচারপতি তদন্তকারী অফিসার মিথিলেশকে সরিয়ে জানিয়েছেন, তিনি তদন্ত করতে সক্ষমই নন। অন্য কোথাও গিয়ে ভাল করে কাজ করুন। ইডি অধিকর্তাকে দ্রুত ওই অপসারণের নির্দেশ কার্যকর করারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ।
ইডির তরফে জানানো হয়েছিল, তাদের অফিসারেরা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পান না। মোট ১৩১টি মামলা চলছে। তার মধ্যে এক এক জনকে ২২টি করে মামলা সামলাতে হয়। এই যুক্তি মানতে চাননি বিচারপতি।
হাই কোর্টের নির্দেশে তৃণমূল সাংসদ অভিষেকের সম্পত্তির বিবরণ আদালতে জমা দিয়েছিল ইডি। সেই বিবরণ নিয়ে গত সোমবার প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সিংহ। ইডির বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর প্রধান আধিকারিক মিথিলেশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ ব্যক্ত করেন বিচারপতি সিংহ। ওই অফিসারকে সে দিন তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনি কি তদন্ত থেকে অব্যাহতি চান? এটা কি পোস্ট অফিস? কেউ কিছু দিল, এসে প্রকাশ করলেন! কার কত সম্পত্তি কিছু দেখলেন না?’’ বিচারপতি জানান, ওই সংস্থা প্রথমে কেন তৈরি করা হয়েছিল, তা জানায়নি ইডি। বড় অঙ্কের লেনদেন হয়েছে বলেছে ইডি, কিন্তু সেই লেনদেন নিয়েও কিছু জানায়নি। ইডির তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘টানেলের শেষে’ কবে পৌঁছনো যাবে? তাদের কি কারও সাহায্যের প্রয়োজন?
ইডির তরফে জানানো হয়েছিল, তাদের লোক কম। ‘ফিনান্সিয়াল ইন্টালিজেন্স ইউনিট’-এর সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। তবে ইডির আইনজীবী এই নিয়ে বিশদে কিছু বলতে চাননি। তিনি বিচারপতিকে অনুরোধ করে বলেন, ‘‘একটু সময় দিন। ইডির ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি, কার সাহায্য নেওয়া যায়।’’
ইডির আইনজীবীর কাছে গত সোমবার বিচারপতি সিংহ আরও জানতে চান, সাংসদ অভিষেকের মাত্র তিনটি বিমা ছাড়া কিছু নেই! কী ভাবে? ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি (ডিটেলস) নেই কেন? বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে গত আট মাস ধরে ইডি যে তদন্ত করেছে, তার নিট ফল শূন্য। এ বিষয়ে ইডিকে বিশদে তথ্য জমা করার নির্দেশ দেন বিচারপতি সিংহ।
ইডির আট মাসের তদন্তের নিট ফল ‘শূন্য’ জানিয়ে বেশ কিছু তথ্য বিশদে দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি সিংহ। লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার ছ’জন ডিরেক্টরের নাম, তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ, সংস্থার লেনদেন, তার মূল্য, এই সংস্থায় কারা ক্লায়েন্ট, তাঁদের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সংস্থার রোজের কাজ কে দেখতেন, সিইও অভিষেকের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, তাঁর মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, সংস্থার সব কর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কারা, কবে সংস্থায় যোগ দিয়েছেন, কেন সংস্থার ঠিকানা পরিবর্তন এবং কার কাছে তদন্ত নিয়ে ইডি সাহায্য চায়, তা জানাতে হবে হাই কোর্টে। বিচারপতি এ-ও জানিয়েছিলেন, আদালত ফল আশা করে। এর পরেই শুক্রবার মিথিলেশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে তাঁকে রাজ্যের সমস্ত মামলা থেকে সরিয়ে দিলেন বিচারপতি সিংহ।