মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ‘‘আপনার নাম শুনেছি’’, জানালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন বলে জানালেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর নির্দেশেই শাসকদল তৃণমূলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই মর্মে প্রধান বিচারপতির কাছে তাঁর নামে অভিযোগ করে চিঠিও গিয়েছে। বিচারপতি অভিজিৎ নিজেই বলেছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কয়েক জন আইনজীবী প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে লেখা হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে কাজ করছি। অথচ চিঠিতে কেউ লিখল না, আমার জন্য কত জন দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ জেলে রয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন।’’ তবে আইনজীবীরা না বললেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে কাজে উৎসাহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার একটি মামলার শুনানির ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘নব মহাকরণ হস্তান্তরের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি গিয়ে বলি, ম্যাডাম আমি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আমি নমস্কার করি, উনিও পাল্টা নমস্কার করেন। আমি বলি, আমি কিছু কথা বলতে যদি পারতাম.... উনি বললেন, এখন তো সুযোগ নেই, আপনি ভালো করছেন, উনি জানান, আপনার নাম শুনেছি, আপনি অনেক কাজ করছেন। আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যান।’’
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই হাই কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রকাশ শ্রীবাস্তবকে ওই চিঠি লেখেন। সে ঠিঠির সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করে দেখেনি। তবে চিঠি প্রসঙ্গে সোমবার নিজেই মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিশ্বব্রত বসুমল্লিককে দেখতে পেয়ে বিচারপতির মন্তব্য করেন, ‘‘আমাকে নিয়ে ব্যস্ত আছেন? আমি জেনেছি কয়েক জন আইনজীবী আমার নামে অভিযোগ করেছেন।’’ মঙ্গলবার আবার এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার একটি মামলার শুনানি চলাকালীনই তিনি বলেন, দুর্নীতি সামনে আনার জন্যই তো আমার জন্য নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ করা হচ্ছে। কিন্তু আমি আবার বলছি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছি, করব। যথেষ্ট হয়েছে।
বস্তুত, মঙ্গলবারও তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ নিয়ে বার বার নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘আমি না কি কোনও রায় দিইনি বলা হচ্ছে। আড়াই বছরে ৯৫টি মামলায় রায় ঘোষণা করেছি। যিনি অভিযোগ তুলছেন, তিনি অন্য মামলায় আমারই রায় দেখিয়ে রায় নিয়ে গিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে দাঁড়িয়ে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন অরুণাভ। যা নিয়ে বিবাদ তৈরি হয় অরুণাভ এবং বিচারপতির মধ্যে। তবে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শেষে অরুণাভকে বিচারপতির উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনি এক জন সৎ মানুষ।’’ সেই ঘটনার পর সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম না করে ‘একটি বেঞ্চের’ বিচার্য বিষয় বদল চেয়ে প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন অরুণাভ-সহ বেশ কয়েক জন আইনজীবী। যদিও এ নিয়ে বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।