ফাইল চিত্র।
কেউ বললেন দু’বছর ধরে স্বামী জেলে, বহরমপুর আদালতে যাতায়াত করতে আর পারছেন না। টাকা তো খরচ হচ্ছেই, সেই সঙ্গে যাতায়াতের কষ্টও আর নিতে পারছেন না। জেলা মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির চর উদয়নগর খণ্ড কলোনি যে পদ্মার শাখা নদীর ওপারে। ওই এলাকা থেকে জলঙ্গিতে পা দিতে গেলেই পেরোতে হয় তিন কিলোমিটারের উপরে বালি ভরা মেঠো পথ। কোথাও কোথাও ছোট ছোট নালা। তার পরে পদ্মার শাখা। ভরা বৈশাখে সে নদীতে আবার জল কম। সূর্য মাথায় করে হেঁটে ফালি রাস্তা ধরে পার হতে হয় নদী। এই এলাকার মানুষের দাবি, এখানে সহজে প্রশাসনের পা পড়ে না। দুয়ারে রেশন প্রকল্পও গ্রামে পৌঁছয় না। পৌঁছনোর মতো অবস্থাও নেই। তা নিতে উদয়নগর খণ্ড কলোনির শ’পাঁচেক পরিবারকে নদী পেরিয়ে জলঙ্গি আসতে হয়। গ্রামে বিদ্যুৎ বলতে সৌর বিদ্যুৎ। পানীয় জলের সুবন্দোবস্তও নেই।
এই গ্রামে আইনি সচেতনতা শিবির করতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের জেলা জজ ইন্দ্রনীল অধিকারী এবং প্রশাসনের অন্য কর্তারা অবস্থা দেখে অবাক। শিবিরে জেলা জজ বলেন, ‘‘অনেক কিছু বলার ছিল। কিন্তু আপনারা এই পরিবেশে থেকেও সুস্থ থাকার চেষ্টা করছেন, এর জন্য ধন্যবাদ। আমরা শহরের মানুষেরা ভাবতেও পারি না এমন একটা পরিবেশে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকা যায়।’’ ওই এলাকা থেকে বহরমপুরে আইনি সহায়তা নিতে যাওয়া যে কতটা কঠিন সেটাও তিনি এ দিন টের পেয়েছেন। আর তার জন্যই সেখানে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘আপনাদের অনেক কিছু জানা নেই, আর এই না জানার ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক পরিষেবা থেকে। এ বার থেকে ১০ বা ১৫ দিন পর পর আমাদের প্যারালিগ্যাল ভলান্টিয়ার্স আপনাদের এখানে আসবে আইনি সহায়তা দিতে।’’ তা ছাড়াও যারা আর্থিক কারণে আইনজীবী দিতে পারছেন না মামলায়, তাঁদের বিনে পয়সায় সরকারি ভাবে আইনজীবী দেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয় এ দিনের অনুষ্ঠানে। চরের বাসিন্দা পারভিনা বিবি বলেন, ‘‘আমার স্বামী দু’বছর ধরে জেলে। সংসারে উপার্জন করার কেউ নেই, কোনও রকমে এক বেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।’’ তাঁর কাছে বহরমপুর যাওয়ার অর্থই নেই, আদালতের খরচ মেটানোর তাই প্রশ্নই ওঠে না।’’ তিনি জেলা জজের প্রস্তাব শুনে খুশি।
তবে এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, এক কোণে পড়ে থাকার জন্য বঞ্চনার পাশাপাশি মিথ্যা অভিযোগেরও শিকার হতে হয়। গ্রামের হাকিম শেখ বলেন, ‘‘অনেক সময় পাচারের মিথ্যা অভিযোগ ওঠে আমাদের বিরুদ্ধে। কখনও কখনও সেই অভিযোগ সত্যি যদি হয়ও, তাতে অনেক রং চাপানো হয়।’’ যেমন, তিনি উদাহরণ দেন, ‘‘কেউ হয়তো ডাল বা চিনি পাচার করেছে, তাকে ধরা হল আরও গুরুতর কোনও ধারা দিয়ে। এ বার তার বাড়ির লোক তাকে ছাড়াতে নাজেহাল হয়ে যায়।’’ স্থানীয় ঘোষপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের বেবি নাজনিন বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলে। মিথ্যা মামলা হলে আইনি পথেই তার মোকাবেলা করতে হবে।’’ ডোমকলের এসডিপিও ফারুক মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘‘এ দিনের সভার পর থেকে এলাকার মানুষ আইনি পরিষেবা আরও অনেক ভাল ভাবে পাবেন।’’