পড়ুয়াদের মিছিলে লাঠিচার্জ, অস্বস্তিতে রাজ্য

সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’টি মিছিল বেরোয়। একটি এসএফআইয়ের, অন্যটি দল-নির্বিশেষে পড়ুয়াদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৪
Share:

বিক্ষোভকারী ছাত্রদের উপরে পুলিশের লাঠিচার্জ। সোমবার যাদবপুরের সুলেখা মোড়ে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

জেএনইউ-এর ঘটনার প্রেক্ষিতে দলমত নির্বিশেষে ছাত্রসমাজ ও সাধারণ নাগরিকদের প্রতিবাদ চলেছে সোমবার দিনভর। কিন্তু সন্ধ্যায় যাদবপুরে পড়ুয়াদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোকে কেন্দ্র করে দানা বাঁধে অন্য বিতর্ক। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ক্ষোভে প্রশমনে উদ্যোগী হয় পুলিশ।

Advertisement

সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’টি মিছিল বেরোয়। একটি এসএফআইয়ের, অন্যটি দল-নির্বিশেষে পড়ুয়াদের। যাদবপুরের পড়ুয়ারা তাদের পোস্টার-প্ল্যাকার্ড পুড়িয়েছে এই অভিযোগ তুলে সন্ধ্যায় সুলেখা মোড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে হাঁটা দেয় বিজেপি। পাল্টা এগিয়ে আসতে থাকেন পড়ুয়ারাও। সেই মিছিলে এসএফআই সমর্থকরাও ছিলেন। সুকান্ত মূর্তির কাছে মুখোমুখি দাঁড়ায় দু’পক্ষ। মাঝে ব্যারিকেড তুলে দেয় পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজেপির মিছিল থেকে ইট, লাঠি উড়ে আসে। রাস্তায় টায়ার পোড়ানো হয়। পড়ুয়ারাও জবাব দেন। দু’পক্ষই ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। লাঠি চালায় পুলিশ। রণে ভঙ্গ দেয় বিজেপি।

এর পর সুলেখা মোড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অবস্থানে বসেন পড়ুয়ারা। দাবি করেন, পুলিশের লাঠিতে আহত হয়েছেন ১২ ছাত্র-ছাত্রী। এসএফআইয়ের যাদবপুর ইউনিটের সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ বলেন, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের উপরে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলেছে। এতেই স্পষ্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ কার পক্ষে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাবে না, মুখে বিষ ঢেলে খুন কিশোরীকে

রাতেই সাগরদ্বীপ থেকে সিপি-কে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশের ভূমিকায় বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি অবিলম্বে ছাত্রদের ক্ষোভ সামাল দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে খবর। লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পড়ুয়াদের বোঝান। ডিসি (সাউথ সুবার্বন) সুদীপ সরকারও বলেন, ‘‘লাঠি চালানোর কোনও অভিপ্রায় ছিল না। গোলমাল ঠেকানোর সময় যদি আমাদের লাঠির আঘাতে কেউ আহত হন, তা হলে আমরা ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও পুলিশের ভূমিকা আরও সংযত হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন। রাতে যাদবপুর থানার কাছে গিয়ে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পরে পড়ুয়ারা জানান, ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে ছাত্র আন্দোলনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকার আশ্বাস পুলিশ কর্তারা দিয়েছেন। সূত্রের খবর, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনে রদবদল হতে পারে।

আরও পড়ুন: রডের জবাব সংবিধান, ফিরে বললেন ঐশী

অন্য দিকে, রাজ্য বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুর অভিযোগ, ‘‘গোটা ঘটনার জন্য যাদবপুরের পড়ুয়াদের প্ররোচনাই দায়ী।’’

ছাত্রদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানো বাদ দিলে অবশ্য প্রতিবাদের সুরে ফারাক ছিল না রাজনীতির বিভিন্ন শিবির বা ছাত্রসমাজের মধ্যে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ স্ট্রিট চত্বর থেকে শুরু করে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, শিক্ষকেরাও পথে নেমেছেন। এই হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে আইআইএম কলকাতার শিক্ষক-পড়ুয়াদের একাংশ নিন্দায় সরব হয়েছেন। আবার জেএনইউ-এর জখম ছাত্রনেত্রী ঐশী ঘোষের বাড়ি দুর্গাপুর থেকে বহরমপুর, কান্দি, সিউড়ি, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামেও প্রতিবাদ হয়েছে। প্রতিবাদীদের বক্তব্য, এটা শুধু জেএনইউ-তে হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, দেশের গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইও বটে। কোনও দিন রাজনৈতিক মিছিলের ত্রিসীমানা না-মাড়ানো বহু নাগরিক, প্রৌঢ়-প্রৌঢ়ারাও মিছিলে হাঁটেন।

‘জেএনইউ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের নির্লজ, প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে রাষ্ট্রীয় শাসক দলের বর্বরোচিত আক্রমণের’ মধ্যে একটি প্রবণতার ছাপ দেখছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরীন ভট্টাচার্যদের মতো বিশিষ্টজনেরা। একটি বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, জামিয়া মিলিয়া, আলিগড়ের পরে একই কায়দায় ফের একটি শিক্ষাঙ্গনে মুক্তচিন্তা দমনের যে চেষ্টা হল, তার নিন্দার কোনও ভাষা নেই।

এ দিন রাজ্য বিজেপি দফতরের সামনে প্রতিবাদ জানায় ছাত্রদের একাংশ। টালিগঞ্জ স্টেশন থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ধর্মতলা থেকে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার অবধি হাঁটে সাতটি শ্রমিক সংগঠন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement