বাঁ দিক থেকে আরাবুল ইসলাম, শওকত মোল্লা এবং নওসাদ সিদ্দিকি। —ফাইল চিত্র।
এক আইএসএফ নেতাকে খুনের মামলায় ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ভাঙড়ের বিধায়ক তথা আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকি তাতে ‘খুশি’ হওয়ার মতো কিছু দেখছেন না। তাঁর দাবি, আরাবুলকে দল থেকে ছেঁটে ফেলার অঙ্গ হিসাবে গ্রেফতার করিয়েছে তৃণমূলই। আর ভাঙড়ের অশান্তি এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলার ‘মূল হোতা’ আরাবুল নন, তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা! ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকতের গ্রেফতারির দাবিতে তাঁরা লড়াই করছেন বলে জানিয়েছেন নওশাদ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভাঙড় থেকে গ্রেফতার হন তৃণমূল নেতা আরাবুল। পঞ্চায়েত ভোটের সময় একটি খুনের মামলায় আট মাস পর তাঁকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। নিয়ে যাওয়া হয়েছে লালবাজার। তৃণমূল নেতার গ্রেফতারির পর শাসকদলের তরফের দাবি, রাজ্যের পুলিশ যে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করে এই ঘটনা তারই প্রমাণ। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ রাজধর্ম পালন করেছে।’’
তবে ভাঙড়ের ‘তাজা নেতা’র গ্রেফতারির পিছনে ‘অন্য কারণ’ দেখছেন বিরোধীরা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, নির্বাচন কমিশন কোনও পদক্ষেপ করার আগে আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাঁর জামিনও হয়ে যাবে। আসলে লোকসভা ভোটের সময় এঁদের ‘কাজে লাগাবে’ তৃণমূল। প্রায় একই দাবি সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীরও। এই প্রেক্ষিতে নওশাদের বক্তব্য খানিক আলাদা। তাঁর দাবি, শওকতকে খেলার জন্য খোলা মাঠ ছেড়ে দিতেই আরাবুলদের ছেঁটে ফেলতে চাইছে তৃণমূল। কিন্তু ভাঙড়ের অশান্তির নেপথ্যে রয়েছেন শওকতই। নওশাদের কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে আরাবুল ইসলামের ব্যক্তিগত কোনও সংঘাত নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে আমারা এগোচ্ছি। আর আরাবুল ইসলামের মতো ব্যক্তিরা গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চান। আমাদের অনেক দলীয় কর্মী খুন হয়েছেন। এ জন্য কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম সিবিআই তদন্ত। তবে হাই কোর্ট অনুমতি দেয়নি। তার পর পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছিল।’’
নওশাদ জানান, খুব শীঘ্রই ওই মামলা আবার আদালতে উঠতে চলেছে। তখন আদালতকে কী জবাব দেবে, এই ভেবেই আরাবুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর পর সরাসরি শওকতকে আক্রমণে চলে যান ভাঙড়ের বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে ভাঙড়ে যে অশান্তি হয়েছে, তাতে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে। অনেক জায়গায় আইএসএফ প্রার্থীদের মনোনয়ন পর্যন্ত জমা দিতে দেয়নি শাসকদল। মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় মারধর হয়েছে। গুলি চলেছে। মনোনয়নপত্রও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’’ আর এর জন্য শওকতকে দায়ী করেছেন নওশাদ। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সব অশান্তির মূল হোতা আরাবুল ইসলাম নন, শওকত মোল্লা। শওকত মোল্লা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের লোক। তাঁকে যাতে গ্রেতার করা হয়, সে জন্য আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছি। সেটা বিচারাধীন।’’ নওশাদ আবারও বলেন, ‘‘আমরা চাই শওকত মোল্লাকে অ্যারেস্ট (গ্রেফতার) করা হোক। যিনি অবজার্ভার (পঞ্চায়েত ভোটের সময় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক) ছিলেন।’’
আরাবুলের গ্রেফতারি নিয়ে নওশাদ এ-ও বলেন যে, তাঁর সন্দেহ আরাবুলকে ছেঁটে ফেলতে চাইছে তৃণমূল। প্রাক্তন বিধায়কের গ্রেফতারি তারই অঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে আরাবুলের শক্তিক্ষয় হয়েছে। তিনি আর দাঁড়াতেই পারছেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুধেল গাই আর দুধ দিতে পারছে না। তাই নির্দেশ এসেছে ওকে অ্যারেস্ট করো, ছেঁটে ফেলো। এখন শওকত মোল্লার খেলার মতো সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শওকতের জন্য যাবতীয় অশান্তি হচ্ছে ভাঙড়ে।’’
এর প্রেক্ষিতে শওকতের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।