Arabul Islam Arrest

আরাবুল ইসলাম গ্রেফতার, খুনের অভিযোগে ভাঙড়ের ‘তাজা নেতা’কে আনা হয়েছে লালবাজারের লক আপে

ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করল উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ। তৃণমূলের ওই নেতার বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটের সময় আইএসএফের এক নেতাকে খুনের অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৪
Share:

আরাবুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।

ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করল উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সম্প্রতি এই থানা কলকাতা পুলিশের আওতায় এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তৃণমূল নেতা আরাবুলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, আগ্নেয়াস্ত্র-সহ দলবদ্ধ ভাবে আক্রমণের অভিযোগও। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের অভিযোগে আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ককে লালবাজারে আনা হয়েছে। রাতে আরাবুলকে থাকতে হবে লালবাজারের লকআপে। পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, যে হেতু আরাবুলের মতো নেতার গ্রেফতারির ঘটনা ‘স্পর্শকাতর’, তাই তাঁকে স্থানীয় থানায় না নিয়ে গিয়ে সোজা লালবাজারে আনা হয়েছে। শুক্রবার তাঁকে বারুইপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করবে পুলিশ।

Advertisement

কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিজয়গঞ্জ থানার একটি মামলার প্রেক্ষিতে। গত বছরের ১৫ জুন ওই মামলা হয়। উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত ভোটের আগে মইনুদ্দিন মোল্লা নামে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর এক নেতাকে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল আরাবুলদের নামে।

আরাবুলের গ্রেফতারির পর বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, আচমকা আট মাস আগের খুনের মামলায় কেন গ্রেফতার করা হল তৃণমূল নেতাকে? আরাবুলের গ্রেফতারির পিছনে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শাসকদলের ‘অভিসন্ধি’ দেখছেন।

Advertisement

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘আগেও আরাবুল গ্রেফতার হয়েছেন। তৃণমূল তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন এবং আবার দলে ফিরেছেন। আসলে কখন এঁরা গ্রেফতার হবেন, কখন দলে থাকবেন— সবই দিদির ইচ্ছায়।’’

অন্য দিকে, আরাবুলের গ্রেফতারির অব্যবহিত পরেই তৃণমূলের মুখপাত্র তথা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাকে কোন মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে স্পষ্ট নয়। তবে একটি ব্যাপার স্পষ্ট। সেটা হল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৃণমূল সরকারের পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে রাজধর্ম পালন করেছে। তিনি দোষী না নির্দোষ, তার প্রমাণ আইনের বিষয়। তবে পুলিশ শাসকদলের কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে না বলে বিরোধীরা যে অভিযোগ করে তা যে সত্য নয়, এটাই তার প্রমাণ।’’

পঞ্চায়েত ভোটের সময় দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় বিধানসভা এলাকা। প্রতি দিন বোমাবাজি, গোলাগুলি এবং সংঘর্ষ বেধেছে। গোলমালে জড়িয়েছে তৃণমূল এবং আইএসএফ। আইএসএফের একাধিক কর্মীর মৃত্যু হয়। নাম জড়ায় আরাবুলদের। ভাঙড়-২ নম্বর ব্লকে মনোনয়নের দিন কর্মী মইনুদ্দিন মোল্লা খুন হন। পুলিশ জানিয়েছে, তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৮, ৩৩২, ৪২৭, ৪৩৫-সহ একাধিক ইত্যাদি ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।

উল্লেখ্য, ভোটের সময় এবং পরে নিরাপত্তা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। আশঙ্কা করেন, তিনি খুন হয়ে যেতে পারেন। এর পরে আরাবুল এবং তাঁর ছেলে হাকিমুল মোল্লার নিরাপত্তা বৃদ্ধি হয়।

পুলিশের আর একটি সূত্র বলছে, ধানকল হাতিশালের মোড় থেকে অনতিদূরে ভগবানপুর অঞ্চলে একটি বোমাবাজির মামলা হয়। বিনায়ক গ্রুপ নামে একটি সংস্থা ওই অঞ্চলে ৪০ বিঘা জমি নিয়েছে। তারা নিজেদের জমির দখল নিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়। অভিযোগ ওঠে পরবর্তী সময়ে আরাবুল ওই সংস্থার থেকে ৬০ লক্ষ টাকা নেন পাঁচিল দিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার পরেও পাঁচিল দিতে পারছিল না ওই সংস্থা। সংস্থার মালিক সরসারি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। সেই মামলায় আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, প্রশ্ন ওঠে প্রথমে। তবে শেষে পুলিশ জানায়, খুনের মামলাতেই ধরা হয়েছে তৃণমূল নেতাকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement