R G Kar Protest

জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ না দেওয়া কি কোর্টের অবমাননা? আইনি ব্যাখ্যায় একই সুরে বিকাশ-কল্যাণ

জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বৈঠক দফায় দফায় ভেস্তে গিয়েছে গত তিন দিন ধরে। বৃহস্পতিবার নবান্নের দুয়ারে গিয়েও ‘শর্ত’ না মানায় বৈঠক না করে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে ফিরে যান তাঁরা।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩৭
Share:

(বাঁ দিকে) বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

গত ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে ছিল আরজি কর মামলার শুনানি। সেই শুনানিতেই শীর্ষ আদালত ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিল। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর নয় নয় করে ৬৫ ঘণ্টা কেটে গেলেও কর্মবিরতি তোলেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। বরং আন্দোলনকে নতুন অভিমুখে নিয়ে গিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, জুনিয়র ডাক্তারেরা কি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ‘অবমাননা’ করছেন?

Advertisement

বিভিন্ন আলোচনা এবং প্রতিক্রিয়ায় শাসকদল তৃণমূলের নেতারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা উল্লেখ করছেন। ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা বলছেন, ১৭ সেপ্টেম্বর পরের শুনানিতে এটাই হবে রাজ্য সরকারের ‘হাতিয়ার’। সুপ্রিম কোর্টকে বলা হবে, প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিলেও কাজে ফেরেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু সত্যিই কি আদালত অবমাননা হয়েছে? এই প্রশ্নে কার্যত একই সুরে আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্য। দুই শিবিরের দুই নেতাই পোড়খাওয়া আইনজীবী। এবং দু’জনেই সাংসদ। দু’জনেরই বক্তব্য, আদালত অবমাননা হয়নি। তবে কল্যাণ বলেছেন, জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে যোগ না দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টকে ‘অসম্মান’ করা হয়েছে।

বিকাশ বলেন, “যাঁরা বলছেন আদালত আবমাননা হচ্ছে, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না জেনেই বলছেন। সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি, ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতেই হবে জুনিয়র ডাক্তারদের। আদালত বলেছিল, জুনিয়র ডাক্তারেরা ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে রাজ্য সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে চাইলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।” কল্যাণের কথায়, “এটাকে আদালত অবমাননা বলা যায় না। তবে নিশ্চিত ভাবেই বিচার ব্যবস্থার যে কাঠামো রয়েছে, তাতে সুপ্রিম কোর্টকে অসম্মান বা অপমান করা হয়েছে।” শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদের আরও বক্তব্য, “জুনিয়র ডাক্তারেরা সুপ্রিম কোর্টকে কাঁচকলা দেখিয়েছেন। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, রাজ্য সরকার সহনশীলতা দেখাচ্ছে।” পেশায় আইনজীবী কল্যাণের সখেদ উক্তি, “সরকার এতটা সহনশীল না হলেও পারে। কারণ, গরিব মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।”

Advertisement

কলকাতা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস কর গুপ্তের আইনি ব্যাখ্যা, “আদালত অবমাননা হয়েছে কি হয়নি, সেটা আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চই নির্ধারিত করবে। এটা অন্য কেউ নির্ধারিত করতে পারেন না।”

আগের শুনানিতে রাজ্যের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে যোগ না দেওয়ার ফলে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৬। পাল্টা জুনিয়র ডাক্তারেরা পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জুনিয়র ডাক্তারদের সংখ্যা ‘নগণ্য’। তাঁরা কেবলমাত্র সহযোগিতা করেন। তা দিয়ে সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে না। তা যদি হয়েই থাকে, তবে তা হয়েছে রাজ্য সরকারের অপদার্থতার জন্য। বুধবার নবান্নে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাজ্য কি জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপের কথা ভাবছে? মন্ত্রী জবাব দিয়েছিলেন, “তেমন কিছু হলে আপনারা জানতে পারবেন।” রাজ্যের এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, “প্রশাসন এখনই হয়তো পদক্ষেপ করবে না। তবে জুনিয়র ডাক্তারেরা কী মনোভাব নিয়ে চলছেন, তা তুলে ধরা হবে সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানিতে (সেই শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আগামী মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর)। তার পরে আদালত যেমন নির্দেশ দেবে তেমন হবে।”

জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বৈঠক দফায় দফায় ভেস্তে গিয়েছে গত তিন দিনে। বৃহস্পতিবার নবান্নের দুয়ারে গিয়েও ‘শর্ত’ না মানায় বৈঠক না করে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলনে ফিরে গিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। নবান্ন সভাঘরে বসে থেকে থেকে ফিরতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও। উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের যে সব চিঠি এত দিন দেওয়া হয়েছে, সব চিঠিতেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উল্লেখ ছিল। মমতা থেকে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা— সকলেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অবতারণা করেছেন। কর্মবিরতি জারি থাকলে হয়তো আগামী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতেও রাজ্যের তরফে এই বিষয়টি তুলে ধরে সওয়াল করা হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কল্যাণ-বিকাশেরা একে সরাসরি ‘আদালত অবমাননা’ বলছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement